ঢাকায় খণ্ড-বিখণ্ড লাশ, বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ

কিছুদিন আগে জরেজ বাংলাদেশে আসেন। এরপর জাপানে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার চান।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
নিহতের বাবার আহাজারি।
নিহতের বাবার আহাজারি। |নয়া দিগন্ত

রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে খণ্ড-বিখণ্ড অবস্থায় উদ্ধার হওয়া আশরাফুল হক হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে বন্ধু জরেজকে খুঁজছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাইকোর্টসংলগ্ন ফুটপাতে প্লাস্টিকের ড্রামে ওই লাশ পাওয়া যায়। প্রথমে পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে প্রযুক্তির মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ‍পুলিশ।

আশরাফুল রংপুরের বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। তিনি কাঁচামালের আমদানিকারক ছিলেন।

আশরাফুলের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি প্রাইম মেডিক্যালে ভর্তি ছিলাম। গত মঙ্গলবার আমাকে দেখে রাত ৯টায় পাশের গ্রামের বন্ধু জরেজকে নিয়ে ঢাকা যায় আশরাফুল। জরেজ মালয়েশিয়ায় থাকতেন। কিছুদিন আগে জরেজ বাংলাদেশে আসেন। এরপর জাপানে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার চান। আমার ছেলের ব্যবসার কাজে ঢাকায় অনেকের সাথে লেনদেন আছে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে জরেজকে দেয়ার জন্য তাকে সাথে নিয়ে যান। কিন্তু যাওয়ার পর থেকে আর কোনো কথা হয়নি। পরে সন্ধায় লাশের খবর আসে। আমার ছেলে মরলো কিন্তু জরেজ তো বেঁচে আছে। তাকে ধরলেই সব পরিষ্কার হবে।’

আশরাফুলের সপ্তম শ্রেণি শিক্ষার্থী কণ্যা তাসনিম জাহান আসফি বলে, ‘মঙ্গলবার সন্ধা ৭টার দিকে আমার বাবা যখন ভাত খায় তখন আশরাফুল আঙ্কেল ফোন করে। ফোন শেষে ভাত খাওয়া শেষ হলে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার কি মন খারাপ। তখন আমি বলি না। এরপর বাবা বলে আমি জরেজ আঙ্কেলসহ ঢাকায় যাচ্ছি। দ্রুত আসবো। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। আমাকে যারা এতিম করে দিলো, তাদের আমি ফাঁসি চাই। জরেজ আঙ্কেলকে গ্রেফতার করলেই খুনের কারণ জানা যাবে।’

আশরাফুলের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, স্বামীর সাথে কথা না হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জরেজের সাথে কথা বলি। এসময় আমার স্বামীর মোবাইল ফোন তার কাছে আছে বলে জানান। কিন্তু স্বামী কোথায় সেটি জানাননি। এতে আমার সন্দেহ হয়। এরপর সন্ধায় আমার স্বামীর খণ্ডবিখণ্ড লাশের খবর পাই। আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে সেটি সিওর হয়। এছাড়া ঢাকায় আমার ননদ ও ভাই লাশ সনাক্ত করেছেন। এ ঘটনার সাথে জরেজ জড়িত। আমার দু’টি সন্তান। তাদের নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো। এলাকায় জিজ্ঞাসা করেন। আমার স্বামী কেমন লোক ছিল। কেনো জরেজ তাকে এভাবে মারলো। তার ফাঁসি চাই।’

আশরাফুলের বোন রাহেলা খাতুন বলেন, ‘বাড়ি থেকে খবর আসে ভাইকে সকাল থেকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আমি জরেজকে ফোন করে বলি, ভাই কোথায়। তখন জরেজ আমাকে বলে তোর ভাই কোথায় আছে আমি জানি না। তখন আমি তাকে বললাম, আপনার সাথে তো আমার ভাই গেছে, আপনার সাথেই তো থাকার কথা। তখন তিনি আমার সাথে রাগ হইছে। একবার বলতেছে গাবতলিত দেখা হইছে। একবার বলতেছে যে রুমে থাকি সে রুমে দেখা হইছে। একবার বলতেছে তোর ভাই চট্রগামে। একবার বলতেছে তোর ভাইয়ের সাথে কালকে কথা হইছে আর কথা হয় নাই। তখন আমি বললাম, ভাইয়ের ফোন কেনো আপনার হাতে। তখন জরেজ বলেন, তোর ভাই আমার হাতে ফোনটা দিয়ে গেছে। আরেকবার বলে অন্যলোক আসি দিয়ে গেছে। একবার বলে ডাস্টবিনে পাইছি। তাতে আমার ধারণা জরেজই আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। জরেজের ফাঁসি চাই।’

এনামুল হক নামের এক এলাকাবাসি জানান, এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ পুরো এলাকাবাসী। সজ্জন মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছিল আশরাফুলের। নিজের গ্রাম তো বটেই পাশের গ্রামেও দান-অনুদান দিতেন তিনি। কিন্তু তাকে এভাবে হত্যা করা হবে সেটা ভাবতেই পারছেন না কেউ। জড়িতদের ফাঁসির দাবি তার।

শাহানা নামের এক এলাকাবাসি জানান, ঢাকা যাওয়ার আগে ৪০ শতক জমি একটি কওমি মাদরাসার জন্য দান করেন আশাফুল। মসজিদ কমপ্লেক্সসহ মাদরাসা নির্মাণের জন্য ৫০ হাজার ইট ভাটায় দিয়েও রেখেছিলেন তিনি। কথা ছিল তিনতলা মসজিদসহ মাদরাসা হবে। সাইনবোর্ড তোলা হয়েছিল।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে আশরাফুল হকের পরিচয় নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন ‍পুলিশ। এ খবর পাওয়া মাত্রই আমরা তার স্ত্রীসহ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার কাছে দিয়েছি। পরিবারের অভিযোগ, ঢাকায় যে বন্ধু তার সাথে গিয়েছিল সে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হবে। প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তদন্ত এবং গ্রেফতার অভিযানও শুরু হয়েছে।’