‘ডিমে আছে প্রোটিন, খেতে হবে প্রতিদিন’

সাভারে বিএলআরআই’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুক্রবার পালিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস। ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের আয়োজনে এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে পালিত হয় বিশ্ব ডিম দিবস।

আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)

Location :

Savar
সাভারে বিএলআরআই’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত
সাভারে বিএলআরআই’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) পালিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস। ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের আয়োজনে এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে পালিত হয় বিশ্ব ডিম দিবস। এবছর ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডিমে আছে প্রোটিন, খেতে হবে প্রতিদিন’।

এ উপলক্ষে শুক্রবার সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

র‌্যালিতে বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুকের নেতৃত্বে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণের সাথে সাথে বিএলআরআই-এর সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি বিএলআরআই-এর পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টার প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বিএলআরআই এর অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে বিএলআরআই-এর পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগ সংলগ্ন ফটক এলাকায় পথচারী ও দুঃস্থদের মধ্যে ডিম বিতরণ করা হয়।

পরে বিকেলে বিএলআরআই-এর চতুর্থ তলার সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

পিএসও ও দপ্তর প্রধান (রু.দা) পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টার এবং প্রকল্প পরিচালক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: সাজেদুল করিম সরকারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পাদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) মহাপরিচালক (সা.দা) ড. শাকিলা ফারুক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার উপ-পরিচালক বেগম মানছুরা হাছিন ও বিএলআরআই এর সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মো: সাজেদুল করিম সরকার। এসময় তিনি তার উপস্থাপনায় বিশ্ব ডিম দিবস পালনের ইতিহাস, তাৎপর্য ও গুরুত্ব, ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প ও ডিম উৎপাদনের অতীত ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষজ্ঞ আলোচনা পর্ব।

এসময় আলোচনায় অংশ নেন পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ ড. নাথু রাম সরকার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ডিম দিবস পালনের উদ্দেশ্য দুইটি। একটি হলো ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে সকলকে জানানো, আর দ্বিতীয় হলো ডিম উৎপাদকদের উৎসাহিত করা, সরকারি বিভিন্ন সুযোগ পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি করা।

বিগত বছরগুলোতে ডিমের উৎপাদন উল্লেখ যোগ্য হারে বাড়লেও, আমাদের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের ডিমের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। এজন্য ডিমের উৎপাদর খরচ কমানোর লক্ষে পোল্ট্রি ফিড তৈরির বিকল্প উৎস্য খুঁজতে হবে। পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী অধিক ডিম উৎপাদশীল মুরগির জাত উদ্ভাবন করতে হবে। বিশেষজ্ঞ আলোচনা পর্বের পরে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত আলোচনা এসময় আলোচকগণ ডিমের উৎপাদন বাড়ানোয় গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি ডিম হতে ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ত উৎপাদন ও প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেগম মানছুরা হাছিন বলেন, ডিম মানে জীবন। মুরগির শরীরে থাকা সব পুষ্টি উপাদানই ডিমের মধ্যে আসে বলে পোল্ট্রির ফিড প্রিপারেশনের উপরেই ডিমের পুষ্টি নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরও পোল্ট্রির ফিড কস্টিং কমানোর লক্ষ্যে এবং দেশে পোল্ট্রি খাদ্যের অন্যতম উপাদান ভুট্টার চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক বলেন, মেধাবী ও বৃদ্ধিদৃপ্ত জাতি গঠনে প্রাণিজ আমিষ, তথা ডিমের বিকল্প নেই। প্রোটিনের অন্যান্য উৎস্যের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষন করলে দেখা যায় ডিম হলো প্রোটিন ও পুষ্টির সাশ্রয়ী উৎস্য। ডিমে এলডিএল অনেক কম থাকে এবং এইচডিএল বেশি থাকে বলে ডিমের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেক কম। ডিম নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে, যা আসলে অমূলক। আমাদের উচিৎ এসকল অপপ্রচারকে আমলে না নিয়ে ডিমের পুষ্টিগুণ বিচার করে দৈনিক অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া।এছাড়াও ডিম দিবস উপলক্ষে বিকেলে সাভারের গেরুয়ায় অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যেও ডিম বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ডিমের পুষ্টিগুণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম বিশ্ব ডিম দিবস পালনের আয়োজন করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটও দিবসটি পালন করে আসছে।

Topics