শহীদ রাব্বির লাশ গলাচিপায় দাফন, শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসা ছাত্র শহীদ রাব্বিরলাশ ৯ মাস ২৫দিন পর পটুয়াখালীর গলাচিপায় দাফন করা হয়েছে।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা

Location :

Galachipa
শহীদ মো: রাব্বি মাতব্বর
শহীদ মো: রাব্বি মাতব্বর |নয়া দিগন্ত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসা ছাত্র শহীদ রাব্বির (১২) লাশ ৯ মাস ২৫দিন পর পটুয়াখালীর গলাচিপায় দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিলো।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়ায় গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শহীদ মো: রাব্বি মাতব্বর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জুয়েল মাতব্বরের ছেলে। সে ঢাকার মিরপুর এলাকার নিজ বাসার কাছে তা’লীমুল ইসলাম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল।

এর আগে তার লাশ রাজধানীর মিরপুর -১৩ শিশু কবর স্থানে দাফন করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।

রাব্বির পিতা জুয়েল মাতব্বর জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে রাব্বি মাতব্বর মিরপুরের তা’লীমুল ইসলাম মাদরাসার হাফেজির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১০ পাড়া কোরআন মুখস্থ করেছিল। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে নিজ মাদরাসার কাছাকাছি ঢাকা মডেল কলেজের সামনে ছাত্র জনতার মিছিল যাচ্ছিল। এ সময় রাব্বিসহ মাদরাসার কিছু ছাত্র সেখানে মিছিল দেখার জন্য উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদেও উপর গুলি চালায়। এসময় অন্য ছাত্রদের সাথে রাব্বিও দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ির নীচে আশ্রয় নেয়। এসময় পুলিশের এলোপাতারি গুলি রাব্বির বুকে বিদ্ধ হয় এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাব্বির লাশ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনতার প্রতিবাদে ব্যর্থ হয়।

স্থানীয় জনগণ রাব্বির লাশ স্থানীয় আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

জুয়েল মাতব্বর আরো জানান, ওই দিন রাতেই তিনি তার ছেলের লাশ নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাধা দেয় এবং উল্টো তাকে হুমকি দেয়। ছেলে কেন মিছিলে গেল এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে তিনি তার ছেলের লাশ ঢাকায় মিরপুর শিশু কবর স্থানে দাফন করেন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে এ ঘটনায় মামলার পাশাপশি শহীদ রাব্বির লাশ নিজ জেলা পটুয়াখালীতে নেয়ার জন্য রাব্বির মা ফিরোজা বেগম আদালতে আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে গত ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহীদ রাব্বির লাশ মিরপুর শিশু কবর স্থান থেকে উঠিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিমাঘরে রাখা হয়।

রোববার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালের হিমাগার থেকে রাব্বির লাশ মর্গে পোর্স্টমর্টেমসহ ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ওই দিনই শেষ বেলায় শহীদ রাব্বির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই রাব্বির লাশ নিয়ে স্বজনরা পটুয়াখালীর নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

সোমবার ভোররাতে রাব্বির লাশ তার নিজবাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাস্তা এলাকায় এসে পৌছলে এলাকায় শোকের ছায়ায় নেমে আসে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বাড়ির সামনে মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে শহীদ রাব্বিকে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আসাদুর রহমান।

এদিকে শহীদ রাব্বি হত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো: আবুল বাশার।