কমছে তিস্তার পানি, এবার ভাঙন আতঙ্ক

দ্রুত পানি কমার কারণে তিস্তায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাব্বির আহমেদ লাভলু, লালমনিরহাট

Location :

Lalmonirhat
কমছে তিস্তার পানি
কমছে তিস্তার পানি |নয়া দিগন্ত

উজানের দেশ ভারতের সিকিম ও বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তার পানি গত কয়েকদিন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর রাতারাতি তা কমে গেছে। তবে দ্রুত পানি কমায় তিস্তার পাড়ে ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দারা।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীটির পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তবে গতকাল একই সময়ে সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৪১ সেন্টিমিটার।

দ্রুত নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার নদীর তীরবর্তী বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল এলাকার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। তবে সব এলাকা পানি নামতে আরো সময় লাগবে। এদিকে পানি নামতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরছে নদীপাড়ের মানুষের মাঝে। নিজেদের কাজকর্ম করতে শুরু করার পাশাপাশি অনেকে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, ‘দ্রুত পানি কমার কারণে তিস্তায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে। যেখানেই ভাঙন দেখা দেবে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে চলতি বছরে চারবারের বন্যায় রোপা আমনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ভয়াবহ ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৯১৫ হেক্টর আবাদি রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে প্রকৃত ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে বন্যার সময় ধানের বীজ চারা সংগ্রহ করে রোপন করলেও এবার তার আর সুযোগ থাকছে না। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। গবাদিপশু লালন পালনকারী খামারি ও কৃষকদের শুকনো খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। নিম্ন অঞ্চলের অনেক মৎষ চাষিদেরও মাথায় হাত পড়েছে। পুকুর ও মাছের ঘের ভেঙে ভেসে যাওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

লালমনিরহাট জেলার প্রায় ২০টি নিম্ন অঞ্চলের ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি থাকলেও প্রকৃত পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি সহযোগিতা না পৌঁছায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে বন্যার্ত মানুষেরা ত্রাণ সহযোগিতা না চেয়ে তিস্তার স্থায়ী সমাধান চান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: সাইফুল আরেফিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ফসল নিমজ্জিত কৃষকদের তালিকা করা হলেও চূড়ান্তভাবে তালিকা প্রণয়ন করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া সরকারি কোনো সহযোগিতা আসলে তা সঠিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বণ্টন করা হবে।’

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি এবারের বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ, মৎস্য ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।’