শ্রমজীবী মানুষ ও গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জিরানী বাজারে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয় বিভিন্ন পদে। কিন্তু গেল জুন ২০২৪ সালের পর দীর্ঘ ১৪ মাসেও বেতন পায়নি তারা। যার ফলে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজেট বরাদ্দ হলেই তাদের পাওনাধি পরিশোধ করা হবে।
রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে আউটসোর্সিংয়ের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে জানা যায়, বাংলাদেশ-কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালে দু’টি পদে (নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) ২০ জনকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। কোরিয়ানদের আওতায় থাকাকালীন নিয়মিত বেতন পেতেন তারা। এরপর হাসপাতালটি রাজস্ব খাতে যাওয়ার পর কয়েক মাস নিয়মিত বেতন দেয়া হত। কিন্তু হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের আওতায় যে আউটসোর্সিং প্রজেক্ট ছিল ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন করা হয়নি। তাই ওই সময় থেকেই আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।
আউটসোর্সিংয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন শ্রী সূর্য বাসফোর নামের একজন। তিনি জানান, ঠিকাদারদের কাছ থেকে সিএমও সুরজিৎ দত্ত থাকাকালীন ডিজি হেলথের আওতায় নিয়ে নেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন অবস্থায় নিয়মিত বেতন পেতেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১৪ মাস কোন বেতন পাচ্ছেন না। ফলে তিনিসহ ২০টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
তিনি জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও তিনি করেন মূলত অফিস পিয়নের কাজ। স্ত্রী-সন্তান ও বাবাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন কবিরপুরে। সেখান থেকেই নিয়মিত কাজে আসেন তিনি। তাদের পাওনাধি পরিশোধ করে দু:খ দূর করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তাপসী মজুমদার নামের আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া আরেক নিরাপত্তাকর্মী জানান, তিনি নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পেলেও মূলত কাজ করছেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে। দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তিনিও বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না পেলে সংসার কি চালানো যায় প্রশ্ন ছুড়েন তিনি।
তিনি জানান, স্বামীকে নিয়ে থাকেন গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে। স্বামী একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। যা বেতন পান একজনের আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন তারা যেন দ্রুত বকেয়া যে পাওনাধি রয়েছে তা যেন পরিশোধ করেন।
সঞ্জিতা সিকদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পেলে মূলত কাজ করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে৷ আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় থাকেন তিনি। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।
এদের মত আবু তারেক, মোকছেদ দেওয়ান, মিজানুর রহমান সহ অন্তত ২০ জন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। তাদের সকলের অবস্থা একই এবং তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেবেন এবং বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।
বাংলাদেশ-কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের এডমিন ডা: মো: মাজহারুল আলম নয়া দিগন্তকে জানান, হাসপাতালটি রাজস্বখাতে যাওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটা শেষ হচ্ছে না। সেই সাথে হাসপাতালের কোনো বাজেট বরাদ্ধ না হওয়ার কারণেই আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।
এছাড়া হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের আওতায় যে আউটসোর্সিং প্রজেক্ট ছিল সেটা জুন ২০২৪ এর পর থেকে নবায়ন হয়নি। এ কারণে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। তবে নবায়ন ও পবাজেট বরাদ্দ হলেই তাদের পাওনাধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।