কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই গ্রামের দু’পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে মিজান মিয়া নামে একজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে সকালে এক সালিশি দরবারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিজান মিয়া ভবানীপুর সোলাইমান পুর মইদর মুন্সিবাড়ির মরহুম রবিউল্লাহ মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আনুমানিক ২০ জন। এদের মধ্যে অপু মিয়া (১৭), আক্তার হোসেন (৩০), দুধ মিয়া (৩০) ও পাপ্পু মিয়া (২২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, ৫৭ বছর ধরে চলছে ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির দু’বংশের দ্বন্দ্ব। ১৫ এপ্রিল দুপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ভবানীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন বংশ অংশ নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। ওই দিন রাতে মৌটুপীর ঘটনার জেরে ভবানীপুরে সংঘর্ষ হয়। বুদুর গোষ্ঠী অংশ নেয় মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ির পক্ষে ও সোলাইমান পুরের মইদর মুন্সি বাড়ি অংশ নেয় সরকার বাড়ির পক্ষে।
শুক্রবার ভবানীপুরের সংঘর্ষের সালিশি দরবার হয়। দরবার চলাকালীন ১১ টার দিকে ভবানীপুরের নামাপাড়া বুদুর গোষ্ঠী বাদশা ডাকাতের গ্রুপ ও সোলাইমান পুর মইদর মুন্সিবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় প্রতিপক্ষের টেঁটার আঘাতে সোলাইমান পুরের মইদর মুন্সি বাড়ির মিজান মিয়া নামের একজন আহত হয়। স্থানীয় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নিহতের ভাই ফয়সাল মিয়া ও পারভেজ মিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি মোটুপী গ্রামে। সেখানে অনেক বছর ধরে ঝগড়া মারামারি এমনকি অনেক খুনও হয়েছে। কয়েক দিন আগে সেখানে দু’বংশের সংঘর্ষ হয়। এ বিষয়টি আমাদের ভবানীপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে ভাবানীপুর গ্রামের নেতাদের সহায়তার মীমাংসা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সালিশি দরবারে আমাদের গ্রামের দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষে আমার ভাইকে বুদুর গোষ্ঠীর লোকজন মেরেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
জানা যায়, ৫৭ বছর যাবত চলছে ভৈরবে দু’বংশের দ্বন্দ্ব। বংশ দু’টি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ি। সরকার বাড়ি পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ। আরেক পক্ষ কর্তা বাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন। দু’বংশের দ্বন্দ্বে দু’পক্ষের খুন হয়েছে ১৪ জন। নিহতের ঘটনায় করা মামলায় উভয় পক্ষের লোকজন জামিনে বাড়ি এলেই সংঘর্ষ বাধে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভবানীপুরের ঝগড়ায় মিজান নামের একজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অপু মিয়া ও দুধ মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’