বগুড়ায় অসংখ্য প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ মামলার পলাতক আসামি আমেনা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহিদা আক্তারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার বগুড়া জজকোর্টের সদর আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আওয়ামী দোসর আবুল কালাম আাজাদকে প্রতারণা ও অর্থ আত্নসাতের মামলায় কারাগারে পাঠান আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমেনা ফাউন্ডেশনসহ সহযোগী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে অনুদান নেওয়ার পর তা আত্মসাৎ, বিভিন্ন ক্লাব, এনজিও এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদান এনে দেয়ার নাম করে অর্থ সংগ্রহ এবং ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগে এনজিও প্রতিষ্ঠান আমেনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী নির্বাহী পরিচালক নাহিদা আক্তারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকটি মামলা দায়ের হয়েছে যা চলমান রয়েছে। তাই গত ১৬ আগস্ট’ বগুড়া সদর থানা পুলিশ প্রতারণার একটি মামলায় চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। সে মামলায় নাহিদা আক্তারের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল।
মামলার নথি অনুযায়ী, বগুড়া জজ আদালতে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বর্তমানে ৮টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মামলায় (১৮৮৫/সি২৫, ২১৫৭/সি২৫, ১৯৯৫/সি২০১৭, ১৮৬৯/সি১৭, ২৩২/সি২০১৯ (শাহজাহানপুর), ১০৬৪/সি২৫, ১০৬৫/সি২৫ ও ৯৯৬/সি২৫ ) স্ত্রী নাহিদা আক্তার বা আবুল কালাম আজাদ দুজনেরই নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই চেক স্ট্যাম্পের বিপরীতে অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ।
এছাড়া, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতে তাদের নামে প্রায় ১ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ০৫/২০২৩ মানি (গোবিন্দগঞ্জ) মামলায় বাদী মো: আসাদুর রহমানকে ২০ লাখ টাকা এবং ১৫/২০২৪ মানি (গোবিন্দগঞ্জ) মামলায় বাদি মোছা: সাবিনা ইয়াসমিনকে ৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে ইতিমধ্যে আদালত আদেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতেও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত ৩-৪টি মামলা এবং একটি মাদক চোরাচালান মামলা চলমান। এর মধ্যে ৪২৪/সি২০২৩ এবং ৫৪০/সি২০২৩ মামলায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সমাজসেবা অফিস, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অনুদান এনে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলার অনুসন্ধান দীর্ঘদিন ধরে চালালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তদন্ত এগোয়নি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে নেতাদের মাধ্যমে ওই আবুল কালাম আজাদ এসব অপকর্ম করেও বিচার মুখোমুখি হয়নি। কারণ ভয়ে প্রতারিতরা তার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে কোনো অভিযোগ দেয়ার সাহস পায়নি। সে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা ও আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জিরো থেকে হিরো বনে যায়।



