রংপুরে হাদির খুনিদের ফিরিয়ে না দিলে ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নর হুমকি

হাসিনাসহ যেসব খুনীদের ইন্ডিয়া আশ্রয় দিয়েছে, তাদের যদি বাংলাদেশে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে অবশ্যই ভারতের সাথে আমাদের কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
রংপুরে শোকর‌্যালি
রংপুরে শোকর‌্যালি |নয়া দিগন্ত

রংপুরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সর্বদলীয় প্রতিরোধ যাত্রা ও শোকর‌্যালি থেকে খুনিকে ফিরিয়ে না দিলে ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হুমকি দিয়েছেন রংপুর জুলাই অভ্যুত্থানের নেতারা।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় নগরীর জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে প্রতিরোধ সমাবেশ থেকে এ হুমকি দেন তারা।

ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, জাতীয় ছাত্রশক্তি, বৈষমবিরোধী ছাত্রআন্দোলনসহ জুলাই বিপ্লবে অংশ নেয়া স্টেকহোল্ডার এর নেতৃবৃন্দ। পরে একটি প্রতিরোধ যাত্রা জুলাই স্তম্ভ থেকে শুরু হয়ে ডিসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় জাতীয় ছাত্র শক্তির মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘রংপুরে যদি আজকের পর থেকে আওয়ামী লীগের কোনো উপস্থিতির তথ্য আমরা পাই। আমাদের মতো ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনের হাতে তুলে দেবো। সই সাথি হাদি ভাইয়ের যারা খুনি। যাদেরকে ইন্ডিয়া আশ্রয় দিয়েছে, তাদের যদি বাংলাদেশে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে অবশ্যই ভারতের সাথে আমাদের কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না। ইন্ডিয়া যদি আমাদের শোষণ করতে চায়, তাহলে সে শোষণের জবাব আমরা দেবো।’

ইমতি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হয়েছিল। তেমনি জুলাই বিপ্লবের পর মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্ত করতেই ভারতের প্রেসক্রিশনে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সামনের নেতৃত্ব নষ্ট করার ষড়যন্ত্র এটি।’

এনসিপির রংপুর মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর নয়ন বলেন, ‘ইন্টিরিম সরকার হাদি ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ। অপদার্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের হত্যাকারীদের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পেয়াজের দাম নিয়ে কথা বলেছেন। তার লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করতেন। পদত্যাগ না করলে টেনে নামানোর জন্য যা যা করার দরকার ছাত্র জনতা করবে।’

এনসিপির রংপুর জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক শেখ রেজওয়ান বলেন, ‘ফাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন আপনারা আর ঘর থেকে বের হইয়েন না। ঘর থেকে বের হলে সরাসরি ইন্ডিয়া চলে যান। তা নাহলে আপনার বিষয়ে এদেশের ছাত্র-জনতা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।’

রংপুর মহানগর শিবির সভাপতি নুরুল হুদা বলেন, ‘যারা আজকের এ পরিস্থিতি জন্য দায়ি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর তাদের প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। জুলাই বিপ্লবের সব খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে ভারত। সবশেষে হাদি ভাইয়ের খুনিদেরও আশ্রয় দিয়েছে ভারত। তাদের সকলকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি না দেয় তাহলে ভারতের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

শিবিরের কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘হাদি ভাইয়ের মাথায় যে গুলি করা হয়েছে এটা টার্গেট করেই করা হয়েছে। এটা বুকে করতে পারতো। শরীরের অন্য জায়গায় করতে পারতো। মূলত মাথায় করা হয়েছে। তার মানে হলো ভারতের আগ্রাসন বিরোধী কথা যারাই বলবে তাদের মাথাকে তারা হত্যা করবে। ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। আজাদির লড়াই থেকে থাকবে না কোনো কারণেই। হাদি ভাই আজাদির সাথে কোনো আপোষ করেননি। আমরাও করবো না।’

এ সময় তারা বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ, কালচারাল ফ্যাসিজম, এবং আওয়ামী লীগকে নরমালাইজড করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই নির্মমভাবে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ওসমান হাদিকে। এর মাধ্যমে মেধাবৃত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং কালচারাল ফ্যাসিজম। শেখ হাসিনাসহ হাদি হত্যাকারীদের ভারত ফিরিয়ে না দিলে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইন্টারিম সরকার এ হত্যার দায় এড়াতে পারবে না।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা হানিফ খান সজীব বলেন, আধিপত্যবাদবিরোধী বিপ্লবী নেতা শরীফ ওসমান হাদিকে ৫ আগস্ট পরে এভাবে মরতে হবে এটা আমাদের জানা ছিল না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট পরে রাজনৈতিকদলগুলোর ক্ষমতা ভাগাভাগিতে ব্যস্ত থাকায় বিপ্লবের সম্মুখ সারির নেতাদের জীবন আজ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।’

শহীদ ওসমান হাদির হত্যার বদলা নিতে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহবায়ক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হাদি জুলাই আন্দোলনের আইকনিক নেতা। হাদিকে সুপরিকল্পিতভাবে প্রি প্লান মার্ডার করা হয়েছে। এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনের আগেই।’

এনসিপির রংপুর জেলা আহ্বায়ক আল মামুন বলেন, ‘‘আমরা মনে করি হাদিকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকাকে বুলেটবিদ্ধ করা হয়েছে। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। ২৪ এর ‍জুলাইয়ের মাধ্যমে সেই বাংলাদেশকে আমরা রক্ষা করেছি। যারা সে রক্ষার কারিগর তাদেরকে ভারত হত্যার মিশনে নেমেছে আওয়ামী লীগকে দিয়ে। এজন্য শেখ হাসিনাসহ খুনিদের ভারত আশ্রয় দিয়েছে। তারা বন্ধু রাষ্ট্রের পরিচয় দিতে চাইলে শেখ হাসিনাসহ হাদির হত্যাকারীদের ফেরত দিতে হবে। তা নাহলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা করা দরকার সেটা করবো।’

গণ অধিকার পরিষদের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক হানিফ খান সজিব বলেন, ‘ যারা জুলাই বিপ্লবে সম্মুখভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। যে রক্তের ওপর দাড়িযে বর্তমান উপদেস্টা পরিষদ ক্ষমতা মসনদে। তার স্বরাষ্ট্র উপদেস্টা আইনশৃঙখলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। স্বরাষ্ট্র উপদেস্টাসহ ফ্যাসিবাদের গুপ্তচর হিসেবে যেসব উপদেস্টা আছেন তাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। করা না পর্যন্ত জুলাইয়ের স্টেকহোল্ডাররা মাঠ ছাড়বে না।

মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী আল আমিন হাসান বলেন, ‘দেশের প্রশ্নে জুলাইয়ের প্রশ্নে সকল বিভেদ ভুলে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে আমরা প্রভু হিসেবে দেখতে চাই না। আমরা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। দয়া করে কেউ প্রভুত্ব দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এর পরিনাম ভালো হবে না।’

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা বিগত দেড় বছর ধরে আওয়ামী লীগকে নর্মালাইজ করার চেষ্টা করেছেন তাদেরও বিচার আমরা করবো। রংপুরসহ সারাদেশে যারা ফ্যাসিস্টের দোসর ছিল তাদেরকেও মেনে নেয়া হবে না।’

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, ‘হাদির হত্যাকারী এবং যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের গ্রেফতার করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই দাবি মানা হবেনা। ততক্সণ পর্যন্ত আমরা এই দাবিতে রংপুরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকবো। একই সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও তাদের যারা দোসর, যারা আবারো মাথা চাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রংপুরের প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভ এবং সমাবেশে অংশ নিয়ে ‘তুমি কে আমি, হাদি হাদি’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির ‍মুখে কথা কবো’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর,’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা,’ ‘গোলামী না আজাদি, আজাদি আজাদি’,সহ নানা শ্লোগান দেন।

জাতীয় ছাত্র শক্তির জেলা আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ-উন-নবী ডন, গণ অধিকার পরিষদের বিভাগীয় সমন্বয়ক হাফি খান সজিব, এনসিপির জেলা আহ্বায়ক মো: আল মামুন, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো: আল আমিন, শিবিরের কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক গোলাম জাকারিয়া, গণ সংহতি আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম, মহানগর শিবির সভাপতি নুরুল হুদা, জেলা এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রেজওয়ান, মহানগর এনসিপির সাংগঠকি সম্পাদক আলমগীর নয়ন প্রমুখ।