জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আমরা মুজিববাদী, ফ্যাসিবাদীর রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। মুজিববাদ এখনো নানা ছলে বিভিন্ন রূপে কাজ করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের জনগণ ৫ আগস্ট মুজিববাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। মুজিববাদের রাজনীতি এই বাংলাদেশে চলতে দেয়া হবে না। মুজিববাদ মানে হচ্ছে ফ্যাসিবাদ, আর বিগত ৫০ বছরে দেশের মানুষের বিভাজনের রাজনীতি। মুজিববাদ মানে হচ্ছে গণহত্যা, খুন ঘুম ধর্ষণ এবং মানবাধিকার হরণের রাজনীতি। মুজিববাদের রাজনীতি হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি। মুজিববাদ মানে হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি সম্পদ দখল আর লুটপাটের রাজনীতি। মুজিববাদ মানে হচ্ছে বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বর্গা দেয়ার রাজনীতি। মুজিবাবাদী আওয়ামী ফ্যসিবাদীরা লাশের ওপর দিয়ে আবারো রাজনীতি করার বিভিন্ন কৌশল করছে। দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাতে তাদের রুখে দিতে হবে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সুনামগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জুমার নামাজ শেষে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক ধারাবাহিক এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুনামগঞ্জের শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ, শোক র্যালি ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসের কনফারেন্স রুমে শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির নেতারা।
এ সময় তিনি আরো বলেন, মুজিববাদের হাত থেকে আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ঐতিহ্যেকে রক্ষা করতে হবে। মুজিববাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার হরণ করেছে। আমরা বাংলাদেশে আর নতুন করে বিভাজন হতে দেব না। বাংলাদেশে বর্তমানে যেহেতু নতুনভাবে তৈরি হয়েছে তা সংস্কারের মাধ্যমে ধরে রাখতে হবে। দেশের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার স্বার্থে, শ্রদ্ধাশীল হয়ে সংস্কারের প্রতি সমর্থন এবং জুলাই সনদ ঘোষণার কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে, একটা নতুন বন্দোবস্তের জন্য আমরা বিগত ৫ আগস্ট যেভাবে ঢাকায় গিয়েছিলাম, মার্চ টু ঢাকা করিয়েছিলাম, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা ও পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, আমরা এমন একটা দেশে বসবাস করি যেখানে বাসের ফিটনেস থাকে না, চেয়ারের ফিটনেস থাকে না, মানুষের ফিটনেস থাকে না, রাষ্ট্রেরও ফিটনেস থাকে না। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একটা ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে। আমরা নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের মানুষকে একটা ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র দিয়ে যেতে পারি না। আপনাদের যে সন্তানরা এই দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন, আহত হয়েছেন, জুলাই আন্দোলনে তাদের জন্য হলেও এবং তাদের আকাঙ্খা পূরণের জন্য হলেও, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও ভবিষ্যতে আমাদের রাষ্ট্রকে ফিটভাবে তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রের মেরামত করতে হবে। সেই রাষ্ট্র মেরামতের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের নতুন বন্দোবস্ত তৈরি করার জন্যই আমরা আপনাদের দ্বারে দ্বারে আসছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জ হওয়ার কেন্দ্রীক এলাকা, নদী পানি মাটি ও কৃষির সাথে মিশিয়ে এই মানুষের জীবন সংগ্রাম। যুগ যুগ ধরে সুনামগঞ্জের মানুষ কৃষি কাজ করে নদী ও পানির সাথে এই মানুষের বসবাস। সুনামগঞ্জ কৃষি ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। জুলাই আন্দোলনে এই সুনামগঞ্জের তিনজন শহীদ হয়ে জাতীয় ইতিহাসে নাম লেখিয়েছে। সুনামগঞ্জকে আমরা নতুন রূপে ঢেলে সাজাবো। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কৃষক শ্রমিক কামার কুমার মজুরসহ দেশের সকল শ্রেণিপেশার নিয়ে রাজনীতি করে।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির জেলা সমন্বয়কারী দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী সুমন। বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: তাসনিম জারা।