টাঙ্গাইলে ‘কিলার গ্যাং (হত্যাকারী দল)’ নামক একটি সংগঠনের প্যাড ব্যবহার করে এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপির তিন নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির দাবি, ‘এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে ও শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহায়তায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইল শহর বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন এবং স্থানীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির মিয়া।
টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, দুপুর ১টার দিকে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনকে আদালতে আনা হয়। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
তবে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ দাবি করেন, এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষ এলাকার ভুক্তভোগী মাছ ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে তার কর্মচারী নিশার হাতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি চিঠি দিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে সেই চিঠি খুলে তিনি দেখতে পান ‘কিলার গ্যাং’ নামক সংগঠনের প্যাডে লেখা এক ভয়ংকর বার্তা। ওই চিঠির মাধ্যমে আগামী ৩ আগস্ট রাত ৭টার মধ্যে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আর চাঁদা না দিলে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে তাকে হত্যা করে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
পরে মাছ ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সন্তোষ বাজার কমিটির আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন জানান, মাছ ব্যবসায়ী আজাহার ভাই একজন সৎ মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত। হঠাৎ করে তিনি শুনতে পান তার কাছে একটি চিঠি এসেছে। সে চিঠিতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ ধরনের ঘটনা সন্তোষ এলাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত শুনতে পাননি। তাই এ চিঠিতে ব্যবসায়ী মহলে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি জানার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। সদর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তে যুক্ত করা হয়। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিলার গ্যাংয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চিঠি পাওয়ার পর তুই যদি বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে শেয়ার করস বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাস তাহলে তোকে কবর দেয়ার জন্য তোর লাশ পরিবার খুঁজে না পাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব।’ চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘মনে রাখবি প্রশাসন/পুলিশ তোর সাথে সব সময় থাকবে না আর বাচাঁতে পারবে না। তোর সঠিক বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্তে তুইসহ তোর পরিবার সুরক্ষিত থাকবি।’
চিঠিতে উল্লেখ করা করা হয়- ‘তোর সার্বিক দিক বিবেচনাপূর্বক কিলার গ্যাং (হত্যাকারী দল) তর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছি, যা আমাদের বিবেচনায় তর কাছে খুবই সামান্য এবং তোর পক্ষে দেয়া সম্ভব। তাই আগামী ৩ আগস্ট রোববার রাত ৭টার সময় একটি শপিং ব্যাগে করে কাগমারী মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে যে গাছে ফরহাদের ছবি লাগানো আছে সেই গাছের নিচে রেখে যাবি। উল্লেখিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে যদি টাকা রেখে না আসোস তাহলে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে তোকে মেরে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে রেখে আসব।’