আখেরি মোনাজাতে মুসল্লির ঢল

লাখো কণ্ঠে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত চুনতী সীরাত ময়দান

মহান আল্লাহর দরবারে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি কামনায় হু হু করে কাঁদছে লাখো মানুষ। কন্ঠে কন্ঠে আমিন ধ্বনিতে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী চুনতী সীরাত ময়দান।

মোছাদ্দেক হোসাইন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

Location :

Lohagara
লাখো কন্ঠে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত চুনতী সীরাত ময়দান
লাখো কন্ঠে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত চুনতী সীরাত ময়দান |নয়া দিগন্ত

তখন ভোররাত। একটু পরেই ফজরের আজান হবে। নিভিয়ে দেয়া হয়েছে মাঠের সব বড় লাইট। এমন বরকতময় মুহুর্তে মহান আল্লাহর দরবারে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি কামনায় হু হু করে কাঁদছে লাখো মানুষ। কণ্ঠে কণ্ঠে আমিন ধ্বনিতে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী চুনতী সীরাত ময়দান।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী গ্রামে ১৯৭২ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী স: মাহফিল। যা এলাকার জন্য শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয় বরং তৌহিদি জনতার বাৎসরিক মিলনমেলা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

সোমবার সারাদিন ও সারারাত নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা শেষে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরের আলো ফোটার আগেমুহূর্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে আখেরি মোনাজাত।

যুগশ্রেষ্ঠ আলেম আশেকে রাসুল (দ.) হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ সাহেব কেবলা চুনতী কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী ৫৫তম আন্তর্জাতিক মাহফিলের আখেরি মোনাজাতে মুসল্লির ঢল নামে। অধিবেশনানুসারে চট্টগ্রাম মেঘনা পেট্টোলিয়ামের মাওলানা জাফর সাদেক মিয়াজী, চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক, প্রবীণ আলেমেদ্বীন মাওলানা সিরাজুল আরেফীন ও ১৯ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মাহফিলে সীরতুন্নবী (সা:) মোতওয়াল্লী কমিটির সভাপতি মাওলানা হাফিজুল ইসলাম আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আখেরি দিবসে বিশেষ মেহমান ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন মোতাওয়াল্লী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাদা মাওলানা আব্দুল মালেক মুহাম্মদ ইবনে দিনার নাজাত। চুনতী মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসাইন ও সাবেক অধ্যক্ষ হাফিজুল হক নিজামীর যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা করেন নারায়ণগঞ্জ জৈনপুরী দরবারের পীর ড. মাওলানা এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ও ড. মাওলানা আ ক ম আবদুল কাদের, কুমিল্লা নাগাইশ দরবারের পীর সাহেব মাওলানা মোশতাক ফয়েজী, ড. হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতি, মাওলানা জহিরুল ইসলাম জাবেরী, মাওলানা এহসান উল্লাহ আব্বাসী, রাহবারে বায়তুশ শরফ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সাইয়িদ আবু নোমান, বিশিষ্ট গবেষক ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, কাজী মাওলানা মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চুনতী মসজিদে বায়তুল্লাহ’র খতিব মাওলানা জাফর সাদেক ইকবাল। দারসূল হাদীস বান্দরবান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আলা উদ্দিন ইমামী।

বক্তারা বলেন, নফসের পরিশুদ্ধি ছাড়া মানুষের ঈমান ও ইসলাম কখনো বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ হয় না। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবী জীবনে প্রশান্তি ও মানসিক স্থিরতা লাভ করে। নফস যখন পরিশুদ্ধ হয়, তখন এর মধ্যে সৎকর্মের প্রতি ফিতরাহ ও আগ্রহ তৈরি হয়। নফসকে কন্ট্রোল করার একমাত্র মাধ্যম হিসাবে তাযকিয়াতুন নফসকে পরিচয় করানো হয়েছে, যা শয়তানের প্ররোচনা থেকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে। দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চুনতী ১৯ দিনব্যাপী ৫৫তম আন্তর্জাতিক মাহফিলে সীরতুন্নবী (সা:), লাখ লাখ মুসল্লি দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও ইহকাল-পরকালের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করে। কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা মুহি উদ্দীন, ক্বারী মাওলানা রবিউল্লাহ, ক্বারী মাওলানা জালাল উদ্দীন মুনিরী, ক্বারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আব্বাসী। না’আতে রসূল (সা.) পরিবেশন করেন শাহাদত হোছাইন, মাওলানা ইউনুস আলী, হাফেজ হোছাইন মুহাম্মদ সাঈদী, তালিমুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল আকরাম হাদী, শাহেদুল আনোয়ার সাদ, শায়ের মুহাম্মদ আবদুস শুকুর, মবরুর হোছাইন ছিদ্দিকী, আল আকিব মুহাম্মদ নাজমুস সাকিব, হাফেজ মাওলানা আবদুল হামিদ। মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, লোহাগাড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আ ন ম নোমান, আবু তাহের, এইচ এম মাহাবুবুল হক, শাহাজাদা তৈয়বুল হক বেদার, কাজী আরীফুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

প্রসঙ্গত: প্রতি বছর এই মাহফিলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেয়। মেহমানদের জন্য প্রতিদিনই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। এবছর মাহফিলের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় কোটি টাকা।