‘ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে’ উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা, দমন, নিপীড়নের মাধ্যমে তারা পাহাড়কে আবারো অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পাহাড়ের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) নেতারা।
এসময় বক্তারা বলেন, ‘বর্মাছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন ক্যাম্প পাহাড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইউপিডিএফের কিছু মুখপাত্র ও তাদের গোষ্ঠীগত সমর্থকরা মিথ্যা প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’
তারা বলেন, ‘বর্মাছড়ির যে স্থানে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা রাষ্ট্রের খাস বনভূমি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ তা বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গা বলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সেনা ক্যাম্প স্থাপন কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি শান্তি, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে নেওয়া রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ।’
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর কবির বলেন, ‘চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গীনালায় এক উপজাতি মেয়েকে কথিত ধর্ষণের নামে মিথ্যা বানোয়াট তকমা লাগিয়ে নিরীহ পাহাড়ি বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এবং এতে উভয় সম্প্রদায়ের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর পূজা-অর্চনায় গিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ১৪/১৫ বছরের এক কিশোরী ত্রিপুরা মেয়েকে তাদের স্ব-জাতি কর্তৃক ধর্ষিত হয় এবং চারজন অভিযুক্ত ত্রিপুরা ধর্ষককে ইতোমধ্যে প্রশাসন গ্রেফতার করেছেন। গত কিছু দিন আগেও একজন চাকমা সম্প্রদায়ের স্কুল শিক্ষিকা খাগড়াছড়ি আলুটিলা বেড়াতে গেলে তাকে এক ত্রিপুরা ধর্ষক অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। প্রশাসনকে দেয়া ওই স্কুল শিক্ষিকার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে সকলে অবগত হয়েছেন। আমরা এই সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এছাড়াও রাঙ্গামাটিতে তাদের স্ব-জাতি কতৃক পূর্ণিমা চাকমাকে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে আমরা পিসিএনপির ব্যানারে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করি। ইতিমধ্যে বান্দরবান জেলার রোমা উপজেলায় তাদের স্ব-জাতি কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনায় আমাদের অঙ্গ সংগঠন পিসিসিপি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। খাগড়াছড়ি নয় মাইল এলাকায় নয় বছরের কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে তাদের স্ব-জাতিরাই। খাগড়াছড়ি সদর শান্তিনগর এলাকায় ইতি চাকমাকে ধর্ষণ করে ইউপিডিএফ নেতা রাজু চাকমা পরে তাকে প্রশাসন গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠান।
এসময় আলমগীর কবির বলেন, ‘ধর্ষক সে যে সম্প্রদায়ের-ই হউক আমরা তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। এগুলোকে ইস্যু বানিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ বারবার পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে যা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলায় রবি কোম্পানির ৫ (পাঁচ) জন টেকনিশিয়ানকে অপহরণ করে সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ। দীর্ঘ প্রায়ই ৫/৬ মাস পর অনেক দেন-দরবার করে মুক্তিপণের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। এভাবে ইউপিডিএফ ধর্ষণ, হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে পাহাড়কে অশান্ত করে রেখেছে। এই সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফকে স্বমূলে নির্মূল করা আজ সময়ের দাবি।’
সংবাদ সম্মেলেনে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বিনির্মাণে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা, বর্মাছড়ি এলাকায় স্থায়ীভাবে সেনা ক্যাম্প স্থাপন, পাহাড়ি ও বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করা, প্রথাগত বিচারের নামে অপরাধ ধামাচাপা বন্ধ করা, রাষ্ট্রীয় আইনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পাহাড়ে সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে সরকারের নিকট দাবি জানান।
এছাড়াও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনির্মানে সকল জাতিগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এগিয়ে এসে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য আহ্বান জানান তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- পিসিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি মো: আবু তাহের, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আনিসুজ্জামান ডালিম, কেন্দ্রীয় মহিলা পরিষদের সভাপতি সালমা আহমেদ মৌ, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মো: লোকমান হোসেন, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন মাহী, জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোকতাদের হোসেন সহ অন্য নেতারা।



