এলাকায় অধিপত্যের দ্বন্দ্বে কিশোর আরিফের মৃত্যু

হাটহাজারীতে ’ভাইজান’ বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্রদল কর্মী হত্যার অভিযোগ

‘ভাইজান বাহিনী’ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। তারা দাবি করেছেন, প্রশাসনের নিরবতা এই ধরনের বাহিনীর উৎসাহ জোগাচ্ছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

Location :

Chattogram
হাটহাজারীতে ’ভাইজান’ বাহিনীর গুলিতে ছাত্রদল কর্মী হত্যার অভিযোগ
হাটহাজারীতে ’ভাইজান’ বাহিনীর গুলিতে ছাত্রদল কর্মী হত্যার অভিযোগ |নয়া দিগন্ত

হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাট রেলস্টেশনের পাশের জনবহুল সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় গত ৮ জুন রাত পৌনে ১২টার দিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় ১৬ বছরের কিশোর মো: আরিফ। সে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে। চার দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে ১১ জুন ভোরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আরিফ মারা যায়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী এবং সাধারণ মানুষ হত্যার বিচার দাবি করছেন।

সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক সন্ত্রাসী দ্বন্দ্ব

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বহুদিন ধরেই চট্টগ্রামের হাটহাজারীর থানাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সন্দ্বীপ কলোনীতে ‘ভুট্টু-সুমন’ ও ‘সাখাওয়াত’ নামে দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে সক্রিয় হয় একটি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চক্র যার নাম ‘ভাইজান বাহিনী’।

৮ জুন রাত পৌনে ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী একটি সিএনজি ও দুটি মোটরসাইকেলে করে সন্দ্বীপ কলোনিতে এসে ‘ভাইজান’-এর পরিচয়ে সন্ত্রাসী সাখাওয়াতকে খোঁজ করে।

স্থানীয়রা এ সময় প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে ও পরে গুলিবর্ষণ করে। তখন ওই ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়। এর পর আরিফকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউ না থাকায় স্থানান্তর করা হয় বেসরকারি সাজিনাজ হাসপাতালে, যেখানে দু’দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে সে মারা যায়।

নিহত আরিফ ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। ফতেয়াবাদ কলেজের পাশে একটি কারখানায় কাজ করত। তার বাবা মো: আবুল ফয়েজ পেশায় রাজমিস্ত্রি, পরিবারটি মধ্যবিত্ত সীমার নিচে জীবনযাপন করত।

‘ভাইজান বাহিনী’ অস্ত্র ব্যবসা থেকে ডাকাতি পর্যন্ত বিস্তৃত অপরাধচক্র -

ঘটনার পর আলোচনার কেন্দ্রে আসে মহিউদ্দিন শিবলু বাচা ওরফে ‘ভাইজান’ নামের এক আলোচিত-ভীতিকর চরিত্র। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, তিনি একাধিক অস্ত্র মামলা, ডাকাতি, জমি দখল, গরু চুরি, এমনকি ডাকাতির সাথেও জড়িত।

২০১৮ সালে বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পর এক বছর কারাভোগ করেন সন্ত্রাসী শিবলু বাচা ওরফে ভাইজান। ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে আবারো ডাকাতি মামলায় গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। তবে রহস্যজনকভাবে জামিনে মুক্তির পর পুনরায় চক্র গঠন করে এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে এখনো বহু মামলা চলমান।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ‘ছত্রছায়া’র অভিযোগ-

নিহত আরিফের ভাইসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই ‘ভাইজান বাহিনী’ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। তারা দাবি করেছেন, প্রশাসনের নিরবতা এই ধরনের বাহিনীর উৎসাহ জোগাচ্ছে।

ছাত্রদলের উত্তর জেলা সভাপতি তকিবুল হাসান চৌধুরী তকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আরিফ ছিল একনিষ্ঠ ছাত্রদল কর্মী। তার হত্যার পেছনে শুধু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাও রয়েছে। আমরা এ হত্যার বিচার দাবি করছি।

তদন্ত ও মামলা প্রক্রিয়াধীন -

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিবার থানায় মামলার প্রস্ততি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো: তারেক আজিজ গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনার পর ওই এলাকা থেকে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং দায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে গ্রেফতার এখনো হয়নি।