পর্যটক বরণে প্রস্তত শ্রীমঙ্গল

পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে চায়ের দেশের সবুজ প্রকৃতি

চায়ের দেশে ভ্রমণের কথা ভাবলেই ভ্রমণপ্রেমীদের মনে ভেসে উঠে চোখ জুড়ানো চা বাগান আর সারি সারি রাবার, লেবু-আনারস বাগানের দৃশ্য। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুক জুড়ে সবুজ চা বাগানসহ নজরকাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রীমঙ্গলে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা
পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে শ্রীমঙ্গলের সবুজ প্রকৃতি
পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে শ্রীমঙ্গলের সবুজ প্রকৃতি |ছবি : নয়া দিগন্ত

পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে চায়ের দেশের সবুজ প্রকৃতি। আর কয়েক দিন পরেই উদযাপন হতে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ হতে পারে ঈদ। ঈদকে উপলক্ষ্য করে বরাবরের মতো এবারো বেশ কয়েক দিনের লম্বা ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এমন ছুটিতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেই পছন্দ করেন ব্যস্ত নগরীর মানুষেরা। তাই প্রতি বছরের মতো এবারো ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত রয়েছে শ্রীমঙ্গল।

পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে শ্রীমঙ্গলের সবুজ প্রকৃতি। ভ্রমণপিপাসুরা চোখ রাঙাতে পারেন হাওর-টিলা-চা বাগান পরিবেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি চায়ের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এসে।

চায়ের দেশে ভ্রমণের কথা ভাবলেই ভ্রমণপ্রেমীদের মনে ভেসে উঠে চোখ জুড়ানো চা বাগান আর সারি সারি রাবার, লেবু-আনারস বাগানের দৃশ্য। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুক জুড়ে সবুজ চা বাগানসহ নজরকাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রীমঙ্গলে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

এখানে চা, রাবার, লেবু, আনারস ও মূল্যবান কাঠ ছাড়াও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ গভীর অরণ্যের খাসিয়া পানের অপরূপ দৃশ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্টির বসবাসের কারণে শ্রীমঙ্গল পর্যটকদের জন্য দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে পুরো জেলার সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। এছাড়া যারা শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্ট বুকিং করেন তারা পুরো সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গলে পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ বিভিন্ন মানের শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটকবান্ধব শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজারের আইনশৃঙ্খলা বর্তমানে দেশের যে কোনো স্থানের তুলনায় অনেক ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত রয়েছে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি হোটেল ও রিসোর্ট এমনটাই নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন পর্যটন সেবা সংস্থার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো: সেলিম আহমেদ।

সরজমিনে ট্যুরিস্ট ভিলেজ হিসেবে পরিচিত রাধানগর এলাকার বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজান মাসে পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে রিসোর্টগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করেছেন। অনেকে প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, ফেস্টুন ছাপিয়ে ও তোরণ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে ওয়েলকাম করছেন ভ্রমণপিপাসুদের। তাদের প্রত্যাশা, এবার রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক শ্রীমঙ্গলে আসবেন প্রকৃতির টানে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রীমঙ্গলে সবুজ চা বাগান ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য ও পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, রমেশের সাত রঙের চা কেবিন ‘নীলকন্ঠ’, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, এম আর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলা, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মনিপুরী ও খাসিয়া পল্লি, সুদৃশ্য জান্নাতুল ফেরদৌসসহ জেলার নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এসব স্থান ঘুরে দেখেন। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, পদ্মা লেক পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত।

ট্যুর গাইড পংকজ ভট্টাচার্য নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আমরা প্রত্যাশা করছি, পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকবে স্থানীয় সকল হোটেল-রিসোর্টসহ দর্শনীয় স্থানগুলো। ইতোমধ্যে অনেকেই খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিছু রুম গেস্টদের জন্য আমরা আগাম বুকিং দিচ্ছি। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এবার ভালো হবে।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার যুগ্ম-আহ্বায়ক ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মো: সেলিম আহমেদ বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আগাম বুকিং হচ্ছে। পর্যটকদের বরণ করতে শতভাগ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আশা করছি, ঈদের ছুটিতে আমাদের সকল হোটেল-রিসোর্ট পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামরুল হোসেন চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেক পর্যটক শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসবেন। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা শতভাগ প্রস্তুত আছি। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশা করছি, নির্বিঘ্নে পর্যটকরা ঈদের ছুটিতে বেড়াতে পারবেন।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: ইসলাম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। এখানকার চোখ জুড়ানো চা বাগানসহ সবুজ প্রকৃতি যে কোনো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বরাবরের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের ঢল নামবে বলে প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন নগরীতে তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তায় সজাগ রয়েছে। আশা করি, পর্যটকরা পরিবার নিয়ে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন।’

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কিংবা দেশের যেকোনো স্থান থেকে রেলপথ অথবা সড়কপথে শ্রীমঙ্গল আসা যাবে। শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ রয়েছে। এখানে রুম ও মান অনুযায়ী এক থেকে ত্রিশ হাজার টাকায় এক রাত্রী যাপন করা যাবে। খাবারের ছোট-বড় অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে শহর এবং শহরতলীতে। পর্যটকরা চাইলে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে পুরো এক, দুই ও তিন দিনের প্যাকেজ নিয়েও আসতে পারবেন। এছাড়া হোটেল-রিসোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইড বা পেজ থেকে হোটেল রুম বুক করা যাবে। তবে আগে বুকিং দিলে পছন্দের রুম পেতে সহজ হবে বলে জানিয়েছেন অনেকে