বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে দু'দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। সাগর উত্তাল থাকায় ইতোমধ্যে গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার ট্রলারগুলো কূলে ফিরে এসেছে।
রোববার (২৭ জুলাই) সাগরের তীব্র ঢেউয়ে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ অংশের কয়েকটি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে উপড়ে গেছে অনেক ঝাউগাছ।
কুতুবদিয়া ও মহেশখালীসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির বেশকিছু এলাকার বসতঘর ও লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সাগরে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের আনিসের ডেইল, তাবলর চর, কাহার পাড়া, সাইট পাড়া ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের অর্ধশত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পুকুর জলাশয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এছাড়া উপজেলার লেমশীখালী, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, কৈয়ারবিল ও বড়ঘোপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ধানের জমি ও চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথোয়াই প্রু মারমা গতকাল বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালীর চিংড়ি চাষি আমান উল্লাহ বলেন, অমাবস্যার জো ও দক্ষিণা বাতাসের ফলে গত কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বাগদা চিংড়ি ঘেরগুলো প্লাবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হলে শতকোটি টাকার আহরণযোগ্য চিংড়ি সমুদ্রে ভেসে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘের মালিকরা।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট মালিক আবদুল মালেক বলেন, ‘সাগরের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে সাগরের প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও সমুদ্রের প্রবল জোয়ারে প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দ্বীপবাসী ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী সোমবার পর্যন্ত দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে তিন ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব এলাকাকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছ।
গতকাল কক্সবাজার শহরের কাছে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে দু’টি বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর ঝাউগাছ ভেঙে পড়ায় আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল দুপুর পর্যন্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এ এলাকায় প্রতিবছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, ‘সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে।’