গুলিবিদ্ধ খুলনা এনসিপি নেতা শঙ্কামুক্ত

‘তিনি আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পরে তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সাথে যুক্ত হন। তিনি একজন ট্রাক ড্রাইভার।’

এরশাদ আলী, খুলনা ব্যুরো

Location :

Khulna
মোতালেব শিকদার
মোতালেব শিকদার |সংগৃহীত

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিভাগীয় প্রধান এবং এনসিপি শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদার (৪০) শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা: হারুন অর রশিদ।

তিনি জানিয়েছেন, গুলি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তার মাথার স্ক্যান করে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সে শঙ্কামুক্ত।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল এলাকায় তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

মোতালেব শিকদারকে একটি ফ্লাটের ভেতরে গুলি করা হয় বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ আরো জানায়, এক নারীসহ তারা (মোতালেব ও অন্যরা) কয়েকজন সেখানে নেশাদ্রব্য পান করছিলেন। কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ হওয়ায় সেখানে মোতালবেকে গুলি করা হয়। পরে পুলিশ ওই ফ্লাট থেকে মদ, ইয়াবা, গুলির খোসা, রক্তমাখা কাপড়সহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছে।

পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাব ও যৌথ বাহিনীর প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে আসে, কিন্তু ঘটনার পর পরই প্রথিমিকভাবে জানা যায় যে, মোতালেবকে একটি চায়ের দোকানে মারধর করার পর গুলি করা হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে, রাতে তম্বি নামের একটি মেয়ের ফ্লাটে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা সেবন, মদ্যপানসহ ফুর্তি করেছিলেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে সহযোগীদের কেউ একজন তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিজেই রিকশা করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্লাটের ভাড়াটিয়া তন্বির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকালে আমরা তথ্য পেয়েছি এনসিপির একজন গাজী মেডিক্যালের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সত্যতা যাচাই কারার জন্য ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থল এবং সাক্ষী খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে ভিকটিমের প্রইভেটকার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় আশেপাশে কোথাও ঘটেছে। তখন লাজফার্মা থেকে আমরা একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমসহ আরো দুইজন এখানে আসেন। সেই ডকুমেন্টস খুঁজতে খুঁজতে আমরা এখানে আসি। মুক্তা হাউজের নিচ তলার ওই কক্ষ থেকে আমরা মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করি। এখানে মেয়ে নিয়ে এসে ফুর্তি করা হতো বলে আমরা জানতে পেরেছি। তদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। এর সাথে আরো অনেকেই জাড়িত আছে। আমরা বাকিদের নাম জানতে পারব।

মজিদ সরণীর মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক মেয়ে ডিসেম্বরের ১ তারিখ নিচের ফ্লোর ভাড়া নেয়। সে নিজেকে এনজিও কর্মী দাবি করে এবং প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তার কক্ষে অনেক লোকের আসা-যাওয়া ছিল। পরে তার অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয় জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিয়েছি। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটে গেল।

এদিকে ছেলের ওপর গুলির ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে আসেন মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কন্যা। সেখানে তারা সাংবাদিকদের জানান, রোববার সন্ধ্যায় তার (মোতালেব) সাথে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। তাদেরকে তিনি জানান যে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। তার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য হাসপাতালে আছেন মোতলেব। এরপর ডাক বাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কেনার জন্য যাব- এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। রাতে আর কোনো কথা হয়নি তার সাথে। বেলা ১১টার দিকে একজন ফোন করে জানান, মোতালেবকে গুলি করা হয়েছে।

তারা আরো জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায়।

এনসিপির খুলনা জেলা প্রধান সমন্বয়কারী মাফুজুল হাসান ফয়জুল্লাহ এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করে বলেন, মোতালেব সার্জিক্যাল হাসপাতালের সামনে গাড়ি থেকে নামার পর তাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়।

মোতালেবের পরিচিতরা জানান, তিনি আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পরে তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সাথে যুক্ত হন। তিনি একজন ট্রাক ড্রাইভার।