রামগঞ্জে হাসপাতালে ঢুকে হামলা, আহত ১০

রামগঞ্জ উপজেলায় হাসপাতালে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রেদোয়ান সালেহীন নাঈমের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা

Location :

Ramganj
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স |সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় হাসপাতালে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রেদোয়ান সালেহীন নাঈমের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

রোববার (৮ জুন) রাত ৯টার দিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ও বাহিরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকের উপজেলার আঙ্গারপাড়া ও টামটা এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত মাসুদ, কামাল ও তুষার নামের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের শৈরশই গ্রামের গনক বাড়ির উঠানে ফুটবল খেলার সময় একই বাড়ির এনজিও-কর্মী সোহাগ আলমের এক বছর বয়সী শিশু আনাছুর রহমানের মাথায় ফুটবল পড়ে গুরুতর আহত হয়।

এ ঘটনায় শিশু আনাছের মা আমেনা আক্তার বিথী ফুটবল খেলোয়াড় রাহুল (১০) ও সাফোয়ানকে (১২) জিজ্ঞাসা করলে তাদের স্বজনদের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিশু আনাছের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে আনাছের বাবা সোহাগ আলম সন্তানকে নিয়ে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে রাহুলের বাবা রাজন ও সাফোয়ানের বাবা লিপনসহ কামাল ও জাহাঙ্গীর শিশুর বাবা সোহাগকে আইনের আশ্রয়ে গেলে গ্রামে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন। পরে আনাছের আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় শিশুটিকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে হাসপাতাল-সংলগ্ন আঙ্গারপাড়া এলাকার রাহুল ও সাফোয়ানের নিকটাত্মীয় মাসুদ, তুষার, কামালসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে শিশু আনাছের ফুফু জান্নাতুল ফেরদাউস জোস্নাকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে চুল টেনে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় শিশুর বাবা সোহাগ আলম তার নিকটাত্মীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, আজিজ শাকিল, সাঈদ আলম শাহীন, জাহীদ হাসান পাবেল, তারেক আজিজ, সায়মন স্যাম, তারেককে খবর দিলে তারা বিষয়টি জানতে হসপিটালে যান। হসপিটালে গিয়ে শিশু আনাছের বাবার কাছে পুরো ঘটনা জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে মাসুদ, তুষার, কামাল ও লিটনসহ ২০-২৫ জনের একটি দল বাঁশ, লাঠি ও কাঠ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেদোয়ান সালেহীন নাঈম, আজিজ শাকিল, সাঈদ আলম শাহীন, জাহীদ হাসান পাবেল, তারেক আজিজ, সায়মন স্যাম, তারেককে বেদম মারধর করেন।

এ ঘটনা খবরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক খবরের কাগজ রামগঞ্জ প্রতিনিধি রায়হানুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও চিত্রধারণ করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

আহতরা সবাই রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে ঢুকে মারধর করার ঘটনায় আমরা নিজেরা উদ্বিগ্ন। আমাদের চিকিৎসক ও নার্স অনিরাপদ।’

ঘটনার খবর পেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম রাত ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই ন্যাক্কারজনক হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে হবে। আমরা পুলিশের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। আমরা অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ‘খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী মাসুদ, তুষার ও কামালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’