বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘একাত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। শেখ মুজিব কখনোই স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে নাই। আওয়ামী লীগ নেতারা কলকাতার সার্কাস আর থিয়েটারে ব্যস্ত থেকেছে। পরে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে এ দেশের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর’র সাথে সাধারণ লুঙ্গি পড়া, খালি গায়ে ও মাথায় গামছা বাঁধা মানুষেরা জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। অথচ দেশ স্বাধীনের পর শহরের ফিটফাট পোশাকের সাহেবরা মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে।’
শনিবার (৯ আগস্ট) খুলনায় প্রেস ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল মহানগর শাখা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। যুদ্ধের পর শেখ মুজিব বাকশাল কায়েম করেছিলেন। ঠিক তেমনি ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী একাত্তরের মতো ২০২৪ সালেও বুক পেতে দিয়েছেন। তাদের রক্তের বিনিময়েই আমরা মুক্ত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এক বছরে এ উপদেষ্টা পরিষদ কোনো সংস্কার করতে পারে নাই। এক আসিফ নজরুল ছাড়া আর কেউ আন্দোলনে অংশ নেয় নাই। পুলিশ-মিলিটারি সরাসরি গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। এ পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া দরকার ছিল। আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়াদের মধ্য থেকে রিক্রুট করে পুলিশ বাহিনী রিফর্ম করা দরকার ছিল।’
সেনাবাহিনীর ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ বাহিনী আমরা গঠন করেছিলাম। কিন্তু হাসিনার পতনের সময় পলায়নরত মসজিদের খতিব, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ অফিসারসহ অন্য দুর্নীতিগ্রস্তদের তারা আশ্রয় দিয়েছিল। হাসিনার শাসন প্রলম্বিত করতে তারা অনেক অন্যায় সুবিধা পেয়েছে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। জনগণ আমাদের হয়ত ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ যা করেছে আমরাও যদি তা করি তাহলে ১৫ দিনও ক্ষমতায় টিকতে পারব না।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘কেউ কেউ নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় স্বাদ পেতে শুরু করেছে। যে কারণে তারা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। এ কারণে তারা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের কথা বলছে। প্রফেসর ইউনূসের সৃষ্টি এনসিপি নামে একটা দল আমাদের জ্ঞান দেয়। আর একাত্তরে যাদের ভূমিকা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল তারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।’
‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।