তফসিল ঘোষণায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) তড়িঘড়ি সন্দেহের কারণ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হঠাৎ করেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা সন্দেহহজনক।
এজন্য তার ওপর কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘১৪, ১৮, ২৪ তিনটি নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এবারো কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা জনগণ মেনে নেবে না।’
শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : গণমাধ্যম ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভায় প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্ব করেন।
দেশের নানা ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘যে ফ্যাসিবাদকে বিদায় করা হয়েছে তারা আর কখনোই ফিরবে না। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের নামে ফ্যাসিবাদকে আবারো প্রবেশের সুযোগ দেয়ার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির সভ্পাতি শফিকুল আলম মনা, মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল ও শহীদ সাকিব রায়হানের মা মিসেস নুরুন্নাহার বক্তৃতা দেন।
খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মতি, নির্বাহী কমিটির সদস্য কৌশিক দে ও আশরাফুল ইসলাম নুর।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন।
জামায়াতে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের জন্য। রাষ্ট্র্রের সকল খাতকে পরিচ্ছন্ন করে এমন ব্যবস্থা কায়েম করা যাতে কেউ ক্ষমতায় গিয়ে আজীবন কর্তৃত্ববাদী হয়ে না উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছিল। কিন্ত সকল রাজনৈতিক দল সব ইস্যুতে একমত হতে পারেনি। এটা সম্ভবও হয় না। কিন্ত আমরা বলেছিলাম, যেসব ইস্যুতে মতৈক্য হয়েছে, সেগুলোতে স্বাক্ষর করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়া হোক।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের অনেক বক্তব্য মিসকোট করা হয়। বলা হচ্ছে জামায়াতে ইসলাম নির্বাচন চায় না। কিন্ত আমার বলছি, ফেব্রুয়ারিতে না, দরকার হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেন। কিন্ত তার আগে আমাদের সন্তানদের যারা মানবতাবিরোধী ভাবে খুন করেছে তাদের বিচার নিশ্চিত দৃশ্যমান করেন, প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার দৃশ্যমান করেন এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেন। কিন্ত তা না করে হঠাৎ করেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলো।’
এ আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘দিল্লির সরকার বাংলাদেশে একটি পাপেট সরকার বসাতে চায়। তাদের সেই চক্রান্ত অব্যাহত আছে। তবে আমাদের আশার কথা হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ আছি। নির্বাচন যদি অনিশ্চিত হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। এজন্য নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ম্যানিপুলেশন করার চেষ্টা করা হলে জনগণ তা রুখে দেবে।’
তিনি খুলনার পুলিশ প্রশাসনের সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।
পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।’