হাতিয়ায় বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার সার্ভিস

সমুদ্র বন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় সেই সিট্রাক সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মাহমুদ নবী। কিন্তু তার উপস্থিতিতেই ঘাট ইজারাদার ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন ট্রলারে যাত্রী পার করছেন।

ইফতেখার হোসেন, হাতিয়া (নোয়াখালী)

Location :

Noakhali
ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন ট্রলারে পার হচ্ছে যাত্রী
ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন ট্রলারে পার হচ্ছে যাত্রী |নয়া দিগন্ত

নোয়াখালীর হাতিয়ায় দ্বীপবাসীর যাতায়াতে নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাট রুটের একমাত্র সরকারি যানবাহন সিট্রাক। সমুদ্র বন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় সেই সিট্রাক সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মাহমুদ নবী। কিন্তু তার উপস্থিতিতেই ঘাট ইজারাদার ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন ট্রলারে যাত্রী পার করছেন। পরে এ বিষয়ে যাত্রীদের প্রশ্নে কৌশলে স্থান ত্যাগ করেন এ কর্মকর্তা।

বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে নলচিরা ঘাটে দেখা যায়, অত্যধিক বোঝাই যাত্রী নিয়ে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরা ঘাটে এবং একইভাবে নলচিরা থেকে কয়েকটি ট্রলার চেয়ারম্যান ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সিট্রাক বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, তিন নম্বর সতর্ক সংকেতের কারণে সিট্রাক যদি বিধি মোতাবেক বন্ধ থাকে তবে কিভাবে বিধি বহির্ভূত ইজারাদারের ফিটনেসবিহীন ট্রলার দেদারসে চলাচল করছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা। এর নেপথ্যে থাকা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন যাত্রীরা।

আলা উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে চিকিৎসা শেষে জেলা থেকে ভোরে চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছি হাতিয়া উদ্দেশে। সিগনালের কারণে নাকি সিট্রাক ছাড়বে না। তাই ঘাটের লোকজন আমাদের ট্রলারে করে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। এ আবহাওয়ায় যদি সিট্রাক অনিরাপদ হয় তবে কাঠের বোট কিভাবে নিরাপদ হবে। আর কতকাল ঘাটের লোকদের কাছে আমরা জিম্মি থাকব?’

শাহেদ উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ঘাট ইজারাদার আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াতে বাধ্য করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। এ টাকার ভাগ বিআইডব্লিউটিএ ও প্রশাসনের লোকজন পায়। তা না হলে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তার সামনে কিভাবে ট্রলার চলতে পারে। ঘাট ইজারাদারের খামখেয়ালীপনা ও প্রভাব বিস্তার করে আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’

এদিকে উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে একজন ঘাট ইজারাদার মতিনকে কল দিলে তিনি বলেন, ‘শত শত মানুষ কষ্ট করছে। আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বোট চালাচ্ছি। আপনাদের কোনো কথা থাকলে নৌবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে কথা বলেন ‘

সিগন্যালের কারণে সিট্রাক বন্ধ অথচ ট্রলার চলাচলের বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়ার বিষয়ে নলচিরা-চেয়ারম্যান ঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মাহমুদ নবীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত চলমান রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি ঘাটে গিয়ে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিট্রাক, ট্রলারসহ সকল নৌ যাতায়াত বন্ধ করে দেন। কিন্তু সিট্রাক বন্ধ থাকলেও ঘাট ইজারাদার ও ট্রলার মালিকরা আদেশ অমান্য করে ট্রলার চালাতে থাকে। তার সাথে ফোর্স না থাকায় তিনি তাদের আটকাতে পারেননি। পরে তিনি সেখান থেকে চলে এসেছেন।’

এ বিষয়ে ঘাট ইজারাদার আমিরুল ইসলাম মতিন বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমাকে নিষেধ না করায় প্রতিদিনের মতো দুই ঘাট থেকে ট্রলার দিয়ে যাত্রী পারাপার করছি।’