আগামী নভেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে : খাদ্য উপদেষ্টা

সোমবার রাজশাহী সার্কিট হাউসে বিভাগের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও আসন্ন মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
বক্তব্য রাখেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার
বক্তব্য রাখেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার |নয়া দিগন্ত

‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা; আগামী মধ্য নভেম্বর থেকে সরকারের খাদ্যগুদামের জন্য আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে’ বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজশাহী সার্কিট হাউসে বিভাগের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও আসন্ন মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদন খরচ ও লাভ বিবেচনা করে আমন ক্রয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। কৃষকদের স্বার্থে সরকার কৃষিতে নিয়মিত ভর্তুকি দিয়ে আসছে। এ আমন সংগ্রহ অভিযান কীভাবে সফল করা যায়, তা নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করা হয়েছে।’

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের খাদ্যভাণ্ডার রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল। চলতি মৌসুমেও আমনের ফলন ভালো হবে। চাল সংগ্রহে এবার মানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। সরকার খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা বজায় থাকবে।‘

সরকারের খাদ্য মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে। এ সময় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুত অতীতের তুলনায় বেশি থাকবে। কিছু চাল আমদানি করতে হতে পারে। তবে আগের বছরের তুলনায় তা অনেক কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টন চাল আমদানি করা লাগবে ‘

তিনি বলেন, ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এ দেশের কৃষকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা। তাদের বাদ দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। আগের বছরগুলোতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ৫ মাস করে হলেও এ অর্থবছর থেকে তা বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। এই কর্মসূচি এ বছরের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও চলমান থাকবে। এছাড়া পূর্বের ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এখন ৫৫ লাখ পরিবারকে কেজি প্রতি মাত্র ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য সূচক বিবেচনা করে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাসমান লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাজশাহীতে ওএমএস কর্মসূচিতে খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছর আগের চেয়ে আমনের ফলন ভালো হবে।‘

এবার খাদ্য আমদানি করা লাগবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের খাদ্য মজুত অত্যন্ত সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর সর্বোচ্চ ৪ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করার প্রয়োজন হবে। ভোক্তা শুধু মানুষ হলে আমদানি করার প্রয়োজন হতো না, কিন্তু গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিও এখন এসব খাবারের ভোক্তা।‘

এ সময় বর্তমানে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল আছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতেও তা থাকবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে ক্রয়মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ফসল উৎপাদনের খরচ বাড়ছে সেই সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত আছি। এসব বিবেচনায় আপনারা দেখেছেন গত বোরো মৌসুমে আগের বছর থেকে কেজিতে চার টাকা বেশি দিয়ে সরকার ধান কিনেছে। এবার আমনের ব্যাপারেও খরচ হিসাব করে তার সাথে লভ্যাংশ যোগ করে কৃষি মন্ত্রণালয় যে দাম প্রস্তাব করবে সেটা বিবেচনা করেই আমরা দামটা নির্ধারণ করব। কৃষকের জন্য যথেষ্ট লাভ রেখেই দাম নির্ধারণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাব উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগে যে চাল দেয়া হয় সেটা বাইরে থেকে আসে না, এটা এখান থেকে সংগ্রহ করা হয়। সরবরাহকারী ও গুদাম কর্মকর্তাদের মধ্যে সব জায়গায় ভালো-মন্দ মানুষ থাকে। কারো মাঝে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ওএমএসসহ অন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি মনিটর করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সেইসাথে খাদ্য গুদামে যেন মানসম্মত ধান-চাল সরবরাহ করা হয় তাও দেখভালের নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য মিলগুলোর সাথে সঠিকভাবে চুক্তি নিশ্চিত করতে বলেন। এ সময় এসব ব্যাপারে কর্মকর্তাদের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেন এ উপদেষ্টা।

বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আবুল হাছানাত হুমায়ূন কবীর, বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।