পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা
নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারি পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগে বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একইসাথে এ ঘটনায় ভাঙারি দোকানদার মানিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করেন।
গ্রেফতারের আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়া দিগন্ত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘পীরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১২ মণ সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ’- এই শিরোনামে সংবাদ প্রচারের পরপরই অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পাঠ্যবই বিক্রির ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আলম, সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম ও ভাঙারি ব্যবসায়ী মানিকের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম ও সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম মিলে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ৫৬৪ কেজি সরকারি পাঠ্যবই ভাঙারি ব্যবসায়ী মানিকের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ মোবাইল ফোনে বই বিক্রির খবর পান। তার নির্দেশে নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল, ফকিরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও সেনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবীর শহরের শান্তিবাগ এলাকা থেকে এক অটোভ্যানচালক সন্তোষ রায়ের কাছ থেকে ৯০ কেজি বই উদ্ধার করেন।
সন্তোষ জানান, বাকি বইগুলো তিনি মাস্টার মোড় এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী মানিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। পরে নিরাপত্তাকর্মী ও শিক্ষকেরা মানিকের দোকানে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি ইতোমধ্যে ৪৭৪ কেজি বই বগুড়ায় বিক্রি করে দিয়েছেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রধান শিক্ষক আলমকে সাথে নিয়ে মানিকের দোকানে যান। সেখানে মানিক স্বীকার করেন যে, তিনি প্রধান শিক্ষক আলম ও সহকারী শিক্ষক সালামের কাছ থেকে বই কিনেছেন। আলমও ঘটনাটি স্বীকার করেন।
সরকারি বই বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় ইউএনও আলম ও মানিককে থানায় সোপর্দ করেন। পরে রাতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখায়। তবে সহকারী শিক্ষক সালাম পলাতক রয়েছেন।
আটক হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আলম দাবি করেন, স্কুলের স্টোররুমে সাপের আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় পরিষ্কারের সময় বই বিক্রির ঘটনা ঘটে। তাকে না জানিয়েই সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বইগুলো বিক্রি করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা সরকারি পাঠ্যবই বিক্রি করা গুরুতর অপরাধ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আলম ও দোকানদার মানিক গ্রেফতার হয়েছেন, আরেকজন (সালাম) পলাতক আছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ইউএনও রকিবুল হাসান বলেন, সরকারি বই বিক্রির খবর পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়। বই বেচাকেনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।