চলন্ত ট্রেনে বন্যহাতীর ধাক্কা, চালকের বিচক্ষণতায় রক্ষা

হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।

মোছাদ্দেক হোসাইন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

Location :

Lohagara
চলন্ত ট্রেনে বন্যহাতীর ধাক্কা, চালকের বিচক্ষণতায় রক্ষা
চলন্ত ট্রেনে বন্যহাতীর ধাক্কা, চালকের বিচক্ষণতায় রক্ষা |নয়া দিগন্ত

কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন এসে পৌঁছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায়। হঠাৎ চালকের চোখে পড়ে রেললাইনে হাতির পাল। দূর থেকে একের পর এক হুইসেল বাজানোয় রেললাইন থেকে সরে দাঁড়ায় হাতির পাল। তবে একটি হাতি ধাক্কা দেয় বগিতে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

দ্রুত ব্রেক চেপে হাতির পাল যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে থামে ট্রেন। ট্রেনচালকের বিচক্ষণতায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায় হাতির পাল। তবে ট্রেনের একটানা হুইসেলে ‘বিরক্ত’ হয়ে একটি হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দেয়। এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

এই আন্ত:নগর ট্রেনে ১৭টি বগিতে যাত্রী ছিল প্রায় ৫০০। লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) ছিলেন আবদুল আউয়াল এবং গার্ড (পরিচালক) সাখাওয়াত হোসেন। শেষ বগিটি ছিল গার্ডের।

ট্রেনচালক বলেন, ‘রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। ট্রেন নিয়ে আসার পথে হারবাং-লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর একটি হাতি চোখে পড়ে। ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার।’

ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতি দেখতে পান আবদুল আউয়াল। তখন তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে দেখার সাথে সাথে ব্রেক চাপতে থাকেন। একপর্যায়ে জরুরি ব্রেকে চাপ দেন। এতে কাজ হয়। হাতি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেন থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পান তিনি। এরপর হাতি যাতে সরে যায় এ জন্য ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন। এতে হাতি রেললাইন থেকে নিচে নেমে যায়।

হাতি নেমে যাওয়ার ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোন করে জানান, হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।

ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেন থেমে গিয়েছিল। ট্রেনচালক ফোন করে জানান, রেললাইনের ওপর হাতি আছে। তাই সতর্কতা হিসেবে বগির ডান পাশের দরজা বন্ধ করে দেই। এরপর বাম পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। চালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। হাতিও রক্ষা পেয়েছে, মানুষেরও কিছু হয়নি।’