আখতার হোসেন

আগের কাঠামোতে নির্বাচন হলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থাকবে

‘বাংলাদেশের মানুষ জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হাসিনার শাসন কাঠামোকে উৎখাত করেছে। তারা চায় না আর এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যেখানে কোনো শাসক আবারো হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur Sadar
আখতার হোসেন
আখতার হোসেন |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে একটা নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। যাতে দেশে ভোটের সংস্কৃতি ফিরে আসে। দেশের যেন গণতন্ত্র সঠিক ভাবে চলে। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আগের কাঠামোর মধ্য থেকে শুধু একটা নির্বাচন যদি হয়, তাহলে আমরা নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা আমাদের থেকে অধরাই থেকে যাবে। সেটা আমাদের হাতের কাছে এসেও হাত ফসকে চলে যাবে।’

বুধবার (১১ জুন) বিকেল ৪টাযর দিকে রংপুরের পীরগাছায় উপজেলা এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় আখতারের সাথে রংপুর মহানগর, জেলা ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ফিতা কেটে এবং ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে উপজেলা কার্যালয়ে উদ্বোধন করেন তিনি। পাশাপাশি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

আখতার বলেন, ‘যে দলই সরকারে যাক না কেন তাদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে। জনগণের কাছে সরকারকে তার প্রত্যেকটি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আকাঙ্ক্ষার নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে আবারো বাংলাদেশের মানুষ মাঠে নামতে বাধ্য হবে।’

‘বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না’ উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ৫০ বছর পরে জীবনের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে যে সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রটিকে নতুন করে করবার এই নতুন যে সুযোগ আমরা পেয়েছি আমরা কোনো হেলায় কারো কোনো চাপে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ সেটাকে আমরা হাতছাড়া করবো না।’

‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাজনৈতিক নয়া বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হাসিনার শাসন কাঠামোকে উৎখাত করেছে। তারা চায় না আর এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যেখানে কোনো শাসক আবারো হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে। যাতে আর কোনো দল সরকারে গেলে জনগণের বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। এই ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে।’

‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদে উল্লেখিত সংস্কার শেষেই নির্বাচকদের পথে হাঁটতে হবে’ উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি নির্বাচন আয়োজনের পূর্বে যে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে তার জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র- জুলাই সনদ যে সংস্কারের কথা বাংলাদেশের সকল মানুষেরা বলেছে, বাংলাদেশের মানুষেরা আগের যে কাঠামো সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন গণতান্ত্রিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ যে কাঠামোর কথা বলেছে সেই কাঠামোর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেই তারপরে এই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘এক ফ্যাসিবাদী হাসিনা বাংলাদেশের শাসন কাঠামো থেকে উৎখাত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্র যেভাবে চললে এই বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেউ কখনো হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠবে না। তেমন একটা যেন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চাওয়া পাওয়া আপনার আমার সকলের। শহরের শিক্ষিত মানুষেরা যেমন চায়, গ্রামের কৃষক, মজুর মানুষেরাও তারাও চায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রটা এমন করে চলুক যাতে কোনো দল সরকারে গেলে জনগণের বিপক্ষে কোনো মতামত দিতে না পারে।’

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় যত মামলা তার তুলনায় বিচারক অনেক কম এবং আদালত পাড়ায় মানুষকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। রাষ্ট্রের কাজ হলো মানুষেরা যখন বিচারের জন্য যায় সে যেন সঠিকভাবে পেরেশানি মুক্তভাবে ন্যায়বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করতে করা। কিন্তু আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের কালাকানুনগুলো থাকার কারণে আমাদের দেশের মানুষেরা প্রেশানি মুক্তভাবে শান্তিতে অফিস আদালতের সুযোগ সুবিধা গুলো পায় না। ন্যায় বিচার গুলো তারা পায় না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির সংস্কারের রূপরেখা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির রূপরেখা উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি সংস্কারের মৌলিক রুপরেখা উপস্থাপন করেছে। যদি মৌলিক সংস্কারে রূপরেখাকে বাংলাদেশে বাস্তবায়নের সম্ভব হয় বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অফিস আদালত জনগণের হয়ে যাবে। জনগণের সেবায় কাজ করবে। বাংলাদেশের কোনো দল ক্ষমতায় এসে জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কোনো কিছু করার সাহসও দেখাতে পারবে না। নাগরিক পার্টির এই রূপরেখার পক্ষে আমাদের সকলকে কথা বলতে হবে।’