দশমিনায় শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় ইউএনও’র অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান ধর্মঘট

‘ওই শিক্ষক ও তার প্রধান শিক্ষকের সাথে আমার মিটিং হয়েছে। শিক্ষকদের সাথে যে সমস্যা হয়েছে তা ইতিমধ্যেই মিটে গেছে এবং ওই শিক্ষক ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপরও ছাত্রদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

দশমিনা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা

Location :

Dashmina
দশমিনায় শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় ইউএনও’র অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান ধর্মঘট
দশমিনায় শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় ইউএনও’র অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান ধর্মঘট |নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় শিক্ষক দম্পত্তিকে লাঞ্ছিতর ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসানের প্রকাশ্যে ক্ষমা ও অপসারণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে মিলিত হয়। পরে ইউএনওর বাসভবনে যাওয়ার পথ অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে স্কুল কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এ আন্দোলনের সাথে একত্মতা প্রকাশ করেন।

জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউএনও ইরতিজা হাসান দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) এহসানুল হক ও তার স্ত্রী বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সহকারী প্রিন্সপাল মাজেদা বেগমকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ইউএনওর অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন আজ তৃতীয় দিনে এসে গড়াল।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের একটি অফিস আদেশে চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত মোট সাতদিন নৈমিত্তিক ছুটিসহ ১৩ আগস্ট ২০২৫ অপরাহ্নে কর্মস্থল ত্যাগ করার কথা বলেছেন। ওই দিনই ইউএনও ইরতিজা হাসান সন্ধ্যার পরে পুলিশ পাহারায় কর্মস্থল ত্যাগ করেন। পরদিন গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ইউএনওর স্থায়ী অপসারণের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেন। শিক্ষার্থীদের এ দাবি না মেনে (১৮ আগস্ট) শিক্ষক দম্পতিসহ ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে জেলা প্রশাসকরে কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য বলেন।

এ ঘটনায় আজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো ইউএনওর বাসভবনের সড়ক আটকিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে বক্তব্য রাখেন- সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফকরুজ্জামান বাদল, সাবেক শিক্ষার্থী আল-আমিন মোল্লা, গাজী সালাউদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তৌহিদুল ইসলাম, যুবঅধিকার পরিষদের সভাপতি কে এম নজরুল সাহিন ও ছাত্রঅধিকার পরিষদের আল-আমিন প্রমুখ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা (১৪ আগস্ট) বৃহস্পতিবার ইউএনও ইরতিজা হাসানের স্থায়ী অপসারণের জন্য তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি না মেনে জেলা প্রশাসক মহোদয় আবার ওই শিক্ষকদের নিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। ইউএনও ইরতিজা হাসানকে দশমিনা থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পেড়েছি যে, এখন নাকি ছাত্ররা আন্দোলন করে না। আন্দোলন নাকি ভিন্ন হাতে চলে গেছে।

তাদের উদ্দেশ্যে ছাত্ররা বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় এরকম কথা বলেছিল। তাতে কিন্তু আন্দোলন থামেনি। আমরাও ইউএনওর স্থায়ী অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আরো শক্তিশালীভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং আগামীকাল সকাল ১০টার দিকে আবার একই স্থানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূটি ঘোষণা করেন।

ভূক্তোভোগী শিক্ষক এহসানুল হক বলেন, ‘সোমবার আমার স্ত্রী, ভাইসহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে ডিসি অফিসে ডেকেছিলেন, সেখানে গেলে এডিসি আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করার কথা বলেন।’

এবিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মাদ আরেফিন বলেন, ‘ওই শিক্ষক ও তার প্রধান শিক্ষকের সাথে আমার মিটিং হয়েছে। শিক্ষকদের সাথে যে সমস্যা হয়েছে তা ইতিমধ্যেই মিটে গেছে এবং ওই শিক্ষক ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপরও ছাত্রদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

উল্লেখ্য, বাসার একটি পাইপ লাইনের পানি পরাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও ইরতিজা হাসান দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) এহসানুল হককে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে লাঞ্ছিত করেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওইদিন রাত ২টার দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শিক্ষক দম্পতিকে মীমাংসা হয়েছে মর্মে জোর পূর্বক একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার ধারন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছেড়ে দেন।

এই বিষয়টিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে গত বুধবার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা একাত্মতা প্রকাশ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনকারীরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ইউএনওকে অপসারণের আল্টিমেটাম দিয়েছেলেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণের কোনো বার্তা না পাওয়ায় এ আন্দোলন আজ (১৯ আগস্ট) তৃতীয় দিনে এসে গড়াল।