গৌরনদীতে হাসপাতাল লিজ নিয়ে ভুয়া চিকিৎসকের সার্জারি

হাসপাতালজুড়ে টাঙানো ছিল তার নামের সাইনবোর্ড। অথচ কোনো পেশাগত ডিগ্রি নেই তার। তিনি যে বিএমডিসি নম্বর ব্যবহার করতেন তাও ভুয়া।

আরিফিন রিয়াদ, গৌরনদী (বরিশাল)

Location :

Barishal
আটক ভুয়া চিকিৎসক ফিরোজ।
আটক ভুয়া চিকিৎসক ফিরোজ। |নয়া দিগন্ত

বরিশালের গৌরনদীতে মাসিক এক লাখ টাকা ভাড়ায় হাসপাতাল লিজ নিয়ে ফিরোজ আহম্মদ (৪৫) নামের এক ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে জটিল অস্ত্রোপচার করানোর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে ওই এলাকার আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ মুন্সী হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ফিরোজ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিষ্ণুকাঠি এলাকার আব্দুল খালেক শেখের ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালিকপক্ষ মাসে এক লাখ টাকা ভাড়ায় পুরো হাসপাতালটি ফিরোজের কাছে লিজ দিলেও তার পরিচয়, ডিগ্রি, নিবন্ধন নম্বর কিংবা চিকিৎসাগত যোগ্যতা কিছুই যাচাই করেনি। এমনকি অস্ত্রোপচারের নথি, রোগীদের ফাইল, ওটি ব্যবস্থাপনার কাগজপত্র কোনোটিই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে তিন মাস ধরে হাসপাতালটি কার্যত এক ভুয়া চিকিৎসকের হাতে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

স্থানীয়রা জানায়, ডা: আমিরুল ইসলাম পরিচয়ে ফিরোজ পুরো হাসপাতাল পরিচালনা করতেন। রোগী দেখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রোপচার সবকিছুই করতেন তিনি। হাসপাতালজুড়ে টাঙানো ছিল তার নামের সাইনবোর্ড। অথচ কোনো পেশাগত ডিগ্রি নেই তার। তিনি যে বিএমডিসি নম্বর ব্যবহার করতেন তাও ভুয়া।

এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলেন, একজন অচেনা মানুষকে ডিগ্রি যাচাই না করেই পুরো হাসপাতালের দায়িত্ব দেয়া চরম অবহেলা। এটা পূর্ণমাত্রায় অপরাধকে সহযোগিতা করা।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তরিকুল ইসলাম জানান, ফিরোজ এবং যারা তাকে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা নেয়া হবে।

অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মেহেদী হাসান বলেন, ‘গৌরনদীর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নানা অভিযোগ আসায় আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছিলাম। সে ধারাবাহিকতায় এ হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর। এজন্য তাকে মোবাইল কোর্টে দণ্ড না দিয়ে নিয়মিত মামলার জন্য থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।’

এদিকে গত তিন মাসে ভুয়া চিকিৎসক ফিরোজ যে সব অপারেশন করেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কারণ ভুয়া চিকিৎসকের হাতে অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীরা এখন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন।