গাজীপুরের শিমুলতলীতে অবৈধ ও অননুমোদিত বাণিজ্য ও কুটির শিল্প মেলার নামে লটারি ও জুয়া মেলা বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে বাংলাদেশ মেশিন টুলস কারখানর সামনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মেলায় প্রবেশ মূল্যের র্যাফেল ড্র’র নামে জুয়া, লাটারির নামে প্রতারণা, মেলার সামনে জনগণের ব্যবহারের একমাত্র সড়কটি নিত্যদিনের যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে ভোগান্তি সৃষ্টি, বার্ষিক পরীক্ষা সমানে রেখে পারিপার্শ্বিক এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটানোসহ নানা সমস্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে তারা এ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তরা অবিলম্বে মেলায় সকল অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আমরা এলাকাবাসী অনেক ধৈর্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এর দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামিয়া ইসলামিয়া গাজীপুর মাদরাসার মুহতামিম মুফতী হাবিবুর রহমান মিয়াজী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহনগর ইমাম সমিতির সেক্রেটারি গাজী আবু বকর সিদ্দিক, সমাবেশের আহ্বায়ক ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্ট আহমেদ সাদিকুর রহমন রুবেল, জুলাই সৈনিক ছাত্রনেতা পিকু, ডুয়েট ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ যুবায়ের, স্থানীয় সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম আলম, ডুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসুম, আলবীর জামে মসজিদের ইমাম মুফতী শামসুল ইসলাম, মুফতী নূরুদ্দীন রাহমানী, মুফতী হুসাইন আহমাদ কাসেমী, মুফতি সালাউদ্দিন নয়নপুরী, মাওলানা আজহার আলী, মুফতি রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানায়, একটি মেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। এর আগেও গত বছর এ ধরনের মেলা আয়োজন করে প্রায় দু’মাস চালিয়েছে। বাণিজ্য ও কুটির শিল্প মেলার নামে লাটারির প্রতারণা ও জুয়ার মেলা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অনুমোদনহীন অবৈধ এ মেলার কারণে স্থানীয় কয়েক লাখ বাসিন্দার দুর্ভোগের শেষ নেই। বার্ষিক পরীক্ষার সমানে রেখে মেলা পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটাসহ বিরক্তিকর প্রচণ্ড যানজটে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে এই মেলার ক্ষতিকর প্রভাব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাণিজ্য ও কুটির শিল্প মেলা নাম দেয়া হলেও এটির মূল উদ্দেশ্য লটারি। প্রতিদিন শত শত অটোরিকশা দিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। র্যাফেল ড্রয়ের নামে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ ও ডিনারসেটসহ নানা রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক টিকিট। আর এসব টিকিট বিক্রির জন্য টার্গেট করা হয়েছে সাধারণ মানুষ। রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন অনেকে র্যাফেল ড্রয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। লটারি যারা পাচ্ছেন তারা মেলার কর্তৃপক্ষের সাজানো লোকজন। কারসাজির মাধ্যমে লটারির বেশিরভাগ পুরস্কারই নিজেদের মাঝেই রেখে দিচ্ছে। এত দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ স্বল্প টাকার বিনিময়ে ভাগ্য ফেরানোর আশায় কুপন কিনলেও খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
গাজীপুর প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেলা পরিপত্র অনুযায়ী জেলা ও মহানগর এলাকায় এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দিতে পারেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু এ মেলা আয়োজনের জন্য অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর কোনো আবেদনই করেনি কর্তৃপক্ষ। তারা একটি অবহিতকরণ চিঠি দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর অননুমোদিত মেলা বন্ধ করার জন্য আমরা মহানগর পুলিশকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। ওই মেলার বিষয়ে পার্শ্ববর্তী ডুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে কেউ কোনো আবেদন করেনি, তাই মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়ার প্রশ্ন অবান্তর।
এ বিষয়ে মেলা আয়োজকদের একজন মো: মাহমুদ দাবি করেন, আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি।
গাজীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, মেলার অনুমতির জন্য আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেনি। তাই আমরা কোনো অনুমতি দেইনি।



