নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও ফতুল্লা সংবাদদাতা
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজট নিরসনে শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এসময় ইজিবাইক চালকরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। এতে নিতাইগঞ্জ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত প্রায় ১৩ কি মি দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা পুলিশের সাথে অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন। এ সময় ইজিবাইক চালকদের সাথে তাদের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে কয়েকজন চালক মারপিট শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষের পর ইজিবাইক শ্রমিকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। তাদের দাবি, যারা তাদের ওপর হামলা করেছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। অবরোধের কারণে কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশের সহায়তায় শহরের প্রবেশ পথে যানজট নিরসনকর্মী নিয়োগ করেন। এতে ফতুল্লার চাঁনমারী এলাকায় ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে ট্রাফিক পুলিশের সাথে কয়েকজন যানজট নিরসনকর্মী দেয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকটি ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এসময় যানজট নিরসনকর্মীরা বাধা দেয়। তখন বাধা উপেক্ষা করে ইজিবাইক চালাতে থাকে। এতে কয়েকজন যানজট নিরসনকর্মী ওই ইজিবাইক গুলোকে আটক করে তাদের চাকা পেরেক দিয়ে ফুটো করে দেয়। এতে চালকরা ক্ষিপ্ত হলে যানজট নিরসনকর্মীরাও তাদের উপর ফুসে উঠে। এক পর্যায়ে যানজট নিরসনকর্মীরা ইজিবাইক চালক মোস্তাক (২৭), হাবিব (২৫), বাবু (২৫), সিফাত (২৬) ও উজ্জলকে (২১) মারধর করে রক্তাক্ত করেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক শহর ও শহরতলীর ইজিবাইক চালকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অন্তত ৩ শতাধিক ইজিবাইক চালক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে লিংক রোড়ের উভয় পাশে সড়ক অবরোধ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, ইজিবাইক চালকরা যখন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে সড়ক অবরোধ করেন তখন কয়েকজন যানজট নিরসনকর্মী এসে সড়ক অবরোধ ছেড়ে দিতে হুমকি দেয়। এসময় ইজিবাইক চালকরা তাদের ধাওয়া করে কয়েকজনকে মারধর করেছে। তবে তাৎক্ষনিক তাদের নাম পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-সচিব অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘যানজট কমাতে স্বেচ্ছাসেবক ছাত্ররা প্রশাসনকে সহায়তা করছে। অনুমোদনহীন ইজিবাইক শহরে ঢুকতে পারবে না। এ নিয়ম মানতে হবে। কিন্তু চালকদের উসকানিতে সংঘর্ষ হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের; ছাত্রদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব এবং ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, পরিস্থিত শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা করা হবে এবং যাদের ইজিবাইক ভাঙ্গা হয়েছে তাদের গাড়ি মেরামত করে দেয়া হবে। যেসব ইজিবাইককে সিটি করপোরেশন রেজিষ্ট্রেশন দিয়েছে সেসব ইজিবাইকই শহরে প্রবেশ করতে পারবে। আর যাদের রেজিষ্ট্রেশন নেই তারা চাঁনমারী মাজার পর্যন্ত যেতে পারবে।
তিনি আরো জানান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত শহরের সব জায়গায় যেতে পারবে না, এই বিষয়ে নির্দেশনা সাইনবোর্ড শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাঁটিয়ে দেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শহরের শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছি।’