নীলফামারীর সৈয়দপুরে পেঁয়াজ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সফল চাষি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার আনোয়ারুল ইসলাম। চারা থেকে পেঁয়াজ উংপাদনে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তার ক্ষেতের ফলন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন এ পেঁয়াজ আবাদে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ চাষ শুরুও করেছেন এবং তার মতোই সাফল্যের আশা করছেন। প্রতিদিনই তাদের পেঁয়াজ ক্ষেত দেখতে আসছেন লোকজন। অথচ কৃষি বিভাগকে জানানো হলেও তারা যেন বেখবর।
উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ারুল ইসলাম। তার বাড়ি সরকারপাড়ায়। ওই এলাকাটি সবজি তথা রবিশষ্য উৎপাদনের জন্য খুবই উর্বর ও বিখ্যাত। এর মধ্যেই দেড় একর জমিতে তিনি দ্বিতীয় বারের মত পেঁয়াজ চারা লাগিয়েছেন। প্রায় ৩৬ দিন বয়সেই পেঁয়াজ ক্ষেত বেশ ফলন্ত হয়ে উঠেছে। আর মাত্র ৩৬ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই এ পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে মিডিয়ার মাধ্যমে দেখছেন যে, চৈত্র মাসে একধরণের পেঁয়াজ ঘরে তোলার পর প্রায় তিন থেকে ছয় মাস ফাঁকা থাকে। এ সময় বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয় এবং এ কারণে অনেক দাম বেড়ে যায়। এজন্য সরকারকে বিদেশ থেকে আমদানী করে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে হয়। এমতাবস্থায় ইউটিউব ঘেটে জানতে পারি শীত আসার আগে কুষ্টিয়া ও নাটোরের চলন বিল এলাকায় একধরণের পেঁয়াজ চাষ করা হয়। আমাদের এলাকায় এ পেঁয়াজ চাষের প্রচলন নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা হলে প্রতিবছরের সংকট মৌসুমের চাহিদা মেটানোসহ বাড়তি আয় করা যায়। সে চিন্তা থেকেই গত বছর প্রথম কুষ্টিয়া থেকে চারা সংগ্রহ করে লালতীর কিং জাতের এ পেঁয়াজ আবাদ করি এবং বেশ ভালো ফলন পাই। সে কারণে এবারও কুষ্টিয়া থেকে চারা এনে দেড় একর জমিতে চাষ করেছি। এ পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ দিনেই তোলা যায়। তবে ৭৫ দিন পর উঠালে ভালো হয়। বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সে হিসেবে ২৫০ মন থেকে ৩০০ মন ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘এবার ৩০ মন চারা লেগেছে। যা আনাসহ খরচ পড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। তাছাড়া জমি আট বার চাষ দিতে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। লাগানোর জন্য শ্রমিকের মজুরি পড়েছে ২০ হাজার টাকা। সেচ ১৫ হাজার, গবরসহ জৈব সার ও রাসায়নিক সার বাবদ ২০ হাজার, কীটনাশক ২৫ হাজার। মোট প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আরো সেচ ও পরিচর্যাসহ মাড়াইয়ের শ্রমিক মজুরিসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। বর্তমান বাজার দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে হয়তো পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে। আর যদি বাজার কম হয় তবুও প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। এতে অর্ধেকের মত লাভ হবে বলে মনে করছি।’
তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ‘আবাদকৃত পেঁয়াজ তোলার আগেই যদি সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানীর উদ্যোগ নেয় তাহলে আমার মতো চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো। আমি আশা করি সরকার কৃষকের সুবিধা বিবেচনা করে দেশীয় পেঁয়াজ তথা মসলাজাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এলসির উদ্যোগ নেবে না। তাহলে আগামীতে আরো অনেক কৃষক এ ধরণের ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হবে। এতে দেশের চাহিদা মেটানোসহ আত্মনির্ভরশীলতা তৈরী হবে। যেমন গতবছর আমার আবাদ দেখে একই এলাকায় সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলামও তার প্রায় দুই একর জমিতে এ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। আগামীতে আরো অনেকে আমার মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করে আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।’
এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিস কোনো সহযোগিতা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না কৃষি অফিস মনে হয় জানেই না। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেনকে একদিন ডেকে এনে আমার পেঁয়াজ ক্ষেত দেখিয়েছি। কিন্তু তিনি আর কখনো আসেননি বা পরামর্শ অথবা সহযোগিতা করেননি। আমি আমার নিজস্ব চেষ্টায় ও অভিজ্ঞতা দিয়েই এ চাষ করছি। এর পাশাপাশি উন্নত জাতের আলু, আদা, রসুন, কচু, সরিষাও চাষ করছি। আর ধান চাষতো আছেই। তবে কৃষি অফিস সহযোগতা করলে এসব চাষিরা বেশ উপকৃত হতো এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি হতো।’
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ধীমান ভূষণ বলেন, ‘চারা থেকে পেঁয়াজ উৎপাদন কার্যক্রম অত্যন্ত লাভজনক। কেউ যদি এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হয় তাহলে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। এতে পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে এবং কৃষকও লাভবান হবে। তাই চাষিরা যদি আমাদের অবগত করেন তাহলে পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হবে।’
উপজেলায় এধরণের কতজন কৃষক ও কত বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।



