বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে একের পর এক বসতবাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো মানুষ। মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালায় তিনটি পয়েন্টে, সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর উত্তরপাড়া ও মোহনা এলাকায় পাঁচটি স্থানের ভাঙন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালায় রাস্তার বেশি অংশ নদীগর্ভে বিলীনের ফলে চার গ্রামের মানুষ চলাচল করতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিনোদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মাজেদা খাতুনের ভিটা মাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ৫০টি বাড়ি, এছাড়া কাশিয়াবালায় আবাদি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীনের পাশাপাশি এতিমখানা, হাফেজিয়া মাদরাসা ও একমাত্র কবরস্থান হুমকির মুখে।
বিনোদপুর গ্রামের চান মিয়া, বাবলু, বুলু, এবাদুল্লাহ, কমরউদ্দিন, আলাউদ্দিন, সায়েদ আলী, ঈমান আলী ও মওলাবক্সসহ অন্তত ৫০টি পরিবারের বসতভিটা এখন নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অনেকের বাড়ির অর্ধেক ইতোমধ্যেই ধসে পড়েছে নদীতে, বাকিটা ভাঙন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অনেক কৃষকের আবাদি জমি নদীতে তলিয়ে গেছে।
এ নদী ভাঙেনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনোদপুর উত্তরপাড়া এলাকার মাজেদা খাতুন (৫৫)। করতোয়া নদীর ভাঙনে শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও চলে গেছে নদী গর্ভে। এখন শুধু বাড়ির একপাশের মাটির চুলা দাঁড়িয়ে আছে নদীর কিনারে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, অন্যের জমিতে ঘর তোলার মতো অর্থও নেই, অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবলু সরকার জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি এসে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয় এবং এখানে নদীর বাঁক থাকায় পানি সরাসরি তীরে আঘাত হানে। ফলে দ্রুত পার ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া বাঙালি নদী খননের ফলে করতোয়ার স্রোত আরো তীব্র হয়েছে, যার প্রভাবে ভাঙন বেড়েছে। প্রতিবছরই করতোয়ার ভাঙনে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হলেও স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা দ্রুত নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তারা আরো বলেন, আমরা কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু জমি নদীতে চলে গেছে, কাশিয়াবালায় রাস্তার বেশি অংশ নদীগর্ভে বিলীনের ফলে চার গ্রামের মানুষকে চলাচল করতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যদি এভাবে ভাঙন চলতে থাকে, তাহলে আর দুই-তিন বিঘা জমির সাথে তবে রাস্তার পুরোটাই, এতিমখানা, মাদরাসা ও কবরস্থানও নদীতে হারিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু হাসান বলেন, বিনোদপুর এলাকায় নদী ভাঙন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি, তারা তীররক্ষার ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। তারা জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাশিয়াবালা পয়েন্টে কাজ শুরু হবে। এছাড়া অন্য জায়গার অনুমোদন পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত করতোয়া নদীর তীর রক্ষায় সকল পয়েন্টের কাজ শুরু হবে।