বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি, ময়মনসিংহ-৫, মুক্তাগাছা আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয় নাই।’
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই-আগস্ট-২৪ এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মুক্তাগাছা উপজেলার আয়োজনে গণমিছিল শেষে মুক্তাগাছা বড় মসজিদ এলাকায় পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জগদ্দল পাথরের মতো গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের কাঁধে বসেছিল। তারা দাম্ভিকতার সাথে বলেছিল, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাদেরকে কেউ সরাতে পারবে না। মাত্র ৪৬ দিনের আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জনগণের কাছে নতিস্বীকার করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে তাদের প্রভুর রাজ্য ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই স্বৈরাচার সরকার বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, আয়না ঘর সৃষ্টি করে, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে, বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। যার কারণে জাময়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি আর যেন কোন স্বৈরাচার তৈরি হতে না পারে। এই জন্য বাংলাদেশের সংবিধান, আইন, আইনি কাঠামো সব কিছুকে সংস্কার করে সংশোধন করতে হবে।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘গত ৫৪ বছর ধরে যে সংবিধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলেছে, এতে বিভিন্ন কায়দায় স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। সুতরাং স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ বানাতে হলে সংবিধান, আইন, আইনি কাঠামো, গভর্নমেন্টের সিস্টেম, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জুডিশিয়ারি সব জায়গায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।’
জুলাই সনদ ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ একটা অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে যদি আইনে পরিণত না হয় তাহলে এর একপয়সাও মূল্য থাকবে না। তাই আজকে আমরা ঘোষণা করতে চাই, আইনি কাঠামোর মধ্যে জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি না দিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবার স্বাধীন আন্দোলন গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ ভালভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পাক। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ তার অধিকার নিয়ে ভোট দিতে যাবে, কেউ কোনো বাধা দিতে পারবে না। এত যদি কেউ বাধা দেয় সেই জায়গায়ই তার সাথে মোকাবেলা হবে। কারণ ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারে কার হস্তক্ষেপ চলবে না। জোর যার মুল্লুক তার সেইদিন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। আইনের ভিত্তিতে দেশ চলবে, এর পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের মানুষ আবার গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হতে হবে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। লেভেল প্লেইং ফ্লিড থাকবে, সকল ভোটাররা, সকল প্রার্থীগণ, সকল মানুষ নির্ভিগ্নে ক্যানভাস করতে পারবে, ভোট চাইতে, চলাফেরা করতে পারবে, যার যেখানে ইচ্ছা মিছিল করার সুযোগ করে দিতে হবে।’
মঙ্গলবার বাদ আছর মুক্তাগাছা বড়মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে গণ মিছিলটি মুক্তাগাছা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো: শামছুল হক, ময়মনসিংহ জেলা কর্ম ও শূরা পরিষদ সদস্য মাওলানা বদরুল আলম, মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ মোজাহিদ, উপজেলা জামায়াতের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা: মাওলানা আজহারুল ইসলাম শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুল হক শরীফ, মুক্তাগাছা উপজেলা শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মোস্তফা রায়হান, পৌর জামায়তের সেক্রেটারি হাফেজ মেহেদী হাসান প্রমুখ।
গণমিছিলে উপজেলার জামায়াতের ইসলামী ও তার সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সকল শ্রেণি পেশার হাজার হাজার লোক অংশ গ্রহণ করেন।