দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ভারতীয় দালালদের ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আনাস, আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা কেনো জীবন দিয়েছিল সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। তারা একেকজন নেতা। কেউ তাদের ভুলে যাবেন না। তারা শুধু একটি রেজিম পরিবর্তনের জন্য জীবন দেয়নি, নতুন বন্দোবস্তের জন্য জীবন দিয়েছে। সেই নতুন বন্দোবস্ত জুলাই বিপ্লব ছিল। রাজনীতিবিদরা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করবেন না, আনাসদের স্বপ্ন বুঝবেন এবং তা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবেন।‘
শনিবার (১৫ নভেম্বর) যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রাচ্য সঙ্ঘ আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা দিল্লির সহযোগিতায় দেশের সার্বভৌমত্ব লুণ্ঠন করেছিলেন। তার প্রভুদের পায়ে দেশের সার্বভৌমত্ব অর্পণ করেছিলেন। আমাদের জুলাইযোদ্ধারা সেই সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। এটি আমানত। রাজনীতিবিদরা এ আমানতের খেয়ানত করবেন না। যদি খেয়ানত করেন তাহলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লব বলতে সংকোচ বোধ করেন। তারা যা করতে পারেননি তরুণরা তা করে দেখিয়েছে। এটি তাদের হীনমন্যতাবোধে ভোগায়। এটি একটি নতুন বন্দোবস্ত, তাই জুলাই বিপ্লব একটি বিপ্লব। বিপ্লত্তোর বাংলাদেশে তিন মাস পরে একটি নির্বাচন হবে বলে আমরা সবাই আশা করছি। সবাই যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এটি সরকারের দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক দলেরও দায়িত্ব। তাই রাজনীতিবিদদের ওয়াদা করতে হবে, নির্বাচনে কোনো কারচুপির আশ্রয় নেবেন না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারলে তবেই কেবল দিল্লির ষড়যন্ত্র পরাজিত হবে। শুধু সাংস্কৃতিক যুদ্ধে নয়, রাজনীতিক যুদ্ধেও আমাদের বিজয়ী হতে হবে।’
এ সম্পাদক বলেন, ‘দেশ প্রকৃত স্বাধীন হয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। ’৭১ সালের পরেও দেশ স্বাধীন ছিল না। শেখ মুজিব দেশ চালাতেন দিল্লির নির্দেশে। শেখ হাসিনাও দিল্লির শাসন কায়েম করেছিলেন। জুলাইযোদ্ধা ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান ভারতের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। ভারতের দালালি করে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আমাদের রাজনীতিবিদরা মনে করেন ভারত ছাড়া তারা ক্ষমতায় টিকতে পারবেন না। আমরা উল্টো বলতে চাই, ভারতের সাথে দালালি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লি চায় না বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে গেলে দিল্লি আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারবে না। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তবেই নির্বাচিত সরকারের অধীনে বাংলাদেশকে আমরা দেখতে পারব।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাচ্য সঙ্ঘের সুপ্রিম কাউন্সিল সদস্য আখতার ইকবাল। বিশেষ আলোচক ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আব্দুল মজিদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান। এ সময় আরো আলোচনা করেন যশোরের জুলাইযোদ্ধা আল মামুন লিখন ও ফাহিম রাফি।



