চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের ঐতিহাসিক আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে সিলেট নগরীতে নির্মিত হয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর স্মৃতির পথ’ এবং উদযাপন হতে যাচ্ছে ‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ সপ্তাহ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সপ্তাহব্যাপী এসব বিশেষ কর্মসূচি সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও পালিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। এতে জুলাই শহীদ আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ অনেকের ছবি ঠাই পেলেও, উপেক্ষিত থেকেছেন সিলেটে পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণকারী একমাত্র সাংবাদিক দৈনিক নয়া দিগন্তের তৎকালীন সিলেট ব্যুরো প্রধান এটিএম তুরাব। বিষয়টি নজরে আসার পরই প্রতিবাদমুখর হয়েছেন সিলেটের সাংবাদিকরা। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
সিলেট প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর’ কর্মসূচির ব্যানারে শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের ছবির স্থান হয়নি কেনো? এই তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কি এক বছরে ভুলে গেছেন শহীদ তুরাবকে? সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাব চাই। এ ছাড়াও সিলেটের অনেক সিনিয়র সাংবাদিক ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এ বিষয়ে।
শুক্রবার নগরীতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- বিশেষ এই সপ্তাহ উপলক্ষে লাইটিং করে সাজানো হয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বিন ব্রিজ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর ছবি-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে ক্বিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে বন্দরবাজার হয়ে রিকাবীবাজার পর্যন্ত।
সিলেট জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর স্মৃতির পথ’ পালিত হচ্ছে। এতে রয়েছে- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিডিও-চিত্র প্রদর্শনী, জনসাধারণের স্মৃতি রোমন্থনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। ৩ আগস্ট (রোববার) বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো: রেজা-উন-নবী ক্বিন ব্রিজ পরিদর্শন করবেন এবং পরে রিকাবীবাজারে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে ভিডিও-চিত্র প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেখানে প্রদর্শনী চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
‘জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর’ সপ্তাহ উদযাপনে জেলা পরিষদকে সহযোগিতা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিলেটের প্রশাসনের সকল অনুষ্ঠানে আমরা বলেছি অন্তত জুলাই-আগস্ট শহীদদের নিয়ে কোনো ব্যানার-ফেস্টুন করলে অন্তত শহীদ তুরাবের ছবিটা রাখবেন। কারণ, জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে সিলেট বিভাগের প্রথম ও একমাত্র শহীদ সাংবাদিক হচ্ছেন এটিএম তুরাব। বার বার তুরাবকে উপেক্ষা করা মানে সিলেটের সাংবাদিক সমাজকে উপেক্ষা করে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে সকল ব্যানার-ফেস্টুনে তুরাবের ছবি সংযুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, অনুষ্ঠানটি একসাথে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যানার-ফেস্টুনও জাতীয়ভাবে দেয়া হয়েছে। তাই সিলেটের সাংবাদিক তুরাবের ছবি যোগ হয়নি। তবে এবার আমরা উদ্যোগ নিয়ে আজকালের মধ্যেই শহীদ সাংবাদিক তুরাবের ছবি যোগ করব।