বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার নিজ জেলা ফেনীর সবত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরে তার পৈত্রিক বাড়ি। ফেনী-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে তিনি টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরমধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুইবার বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন।
এসময়কালে ফেনীতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে তার হাত ধরে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গত ২৯ ডিসেম্বর তার পক্ষ থেকে ওই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু জানান, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পরিচয়ে ধন্য ফেনী জেলা। দেশের মানচিত্রে এই ছোট জেলাটি দেশের রাজনীতিতে আলোচিত হওয়ার কেন্দ্রবিন্দু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু দলীয় নেতাকর্মীরাই নয় তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দলীয় সীমানা ছাড়িয়ে দেশের আপামর মানুষের মনের মণিকোঠায়।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু বলেন, ‘ফেনীর মেয়ে খালেদা গর্ব মোদের আলাদা’- এটা ছিল আমাদের প্রাণের স্লোগান। দল-মত নির্বিশেষে আমরা ফেনীর মানুষ তাকে নিয়ে গৌরববোধ করতাম। তার মৃত্যুতে দেশ যেমন একজন অভিভাবক হারিয়েছে তেমনি ফেনীবাসীরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে ফেনীর ঘরে ঘরে কান্নার রোল চলছে। আমরা সপ্তাহব্যাপী শোক ঘোষণা করেছি। জেলার প্রতিটি মসজিদে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন চলছে। দলীয় নেতকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও কালো ব্যাচ ধারণ করে শোক প্রকাশ করছেন।’
ফেনীর সিনিয়র সাংবাদিক মীর হোসেন মীরু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরেই ফেনীর বড় উন্নয়নগুলো হয়েছে। শহরের রাজাঝির দীঘির পাড় থেকে বিশাল জায়গা জুড়ে জেলা সদর দফতর স্থানান্তর, বিজয়সিংহ দীঘির পাড়ে দৃষ্টিনন্দন সার্কিট হাউজ নির্মাণ, ফেনী গার্লস্ ক্যাডেট কলেজ স্থাপন, ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট স্থাপন, জেলা কারাগার স্থানান্তর, ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের জন্য ভূমি দান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জন্য ভূমি দানসহ সামগ্রীক উন্নয়নে তার অবদান ফেনীবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’
ফেনী ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব ডা: তবারক উল্যাহ বায়েজিদ বলেন, ‘ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্রে সরকারি জায়গা বরাদ্দ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন ও অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ছোট জেলা ফেনীর উন্নয়ন ও মর্যাদা জাতীয় পর্যায়ে অনেকখানি বেড়ে যায়।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরশুরাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তালেব নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ফেনীর দুঃখ’খ্যাত মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেন। এছাড়া ফুলগাজীতে আঞ্চলিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, ফুলগাজীকে উপজেলায় উন্নিতকরণ ও এখানে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণে তার অবদান রয়েছে।
ফেনী সমিতি ঢাকার সভাপতি আবদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯১ সালে ফেনী-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজ এলাকার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন বেগম খালেদা জিয়া। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সার্বিক অগ্রগতিতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির ফখরুল আলম স্বপন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে ফুলগাজী সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বেগম খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি শ্রীপুরের মজুমদার বাড়ির মসজিদ ও মাদরাসায় কোরআনখানী, মিলাদ, দোয়ার আয়োজন চলছে।’
ফুলগাজী বেগম খালেদা জিয়া মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন আহমদ মজুমদার জানান, ‘প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফুলগাজী উপজেলা সদরে তার (বেগম খালেদা জিয়ার) নিজ মালিকীয় ১.৬৬ একর জমির উপর ১৯৯৪ সালে গড়ে উঠে বেগম খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে বেগম খালেদা জিয়ার নামটি মুছে দেয়া হয়। অধ্যাবধি তার দানে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানটির নাম ফুলগাজী মহিলা কলেজ।’



