৯৬ দিনে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি

গ্যাসের সঙ্কট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানাটি ২৪৮ দিন উৎপাদন বন্ধ ছিল।

এস এম রহমান, পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)

Location :

Anwara
ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান
ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় দৈনিক সাড়ে চার কোটি টাকা করে ৯৬ দিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে সার কারখানাটি। এতে বন্ধ রয়েছে সার উৎপাদন কার্যক্রম।

১৯৮৮ সালে সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অজুহাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকার উপরে ক্ষতি গুনতে হয়েছে।

সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল থেকে গতকাল ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৯৬ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ার কারণে সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজি ডিসিএল) ও বিসিআইসিকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, বিদেশ থেকে সার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কৃষি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তায় তৎকালীন সরকার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) নামে এই সার কারখানাটি স্থাপন করেন এবং ২৯ অক্টোবর ১৯৮৭ থেকে কারখানাটিতে সার উৎপাদন শুরু হয়।

কারখানা স্থাপনে ওই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৫৫৬.৩০ কোটি টাকা। তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১১৫৯.৯১ কোটি টাকা। শুরুতে কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ইউরিয়া এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ও অ্যামোনিয়া এক হাজার মেট্রিক টন। এতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হত।

বর্তমানে বিভিন্ন কারণে উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে ইউরিয়ার সার উৎপাদন। এবং গড়ে ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছে ওই কারখানার মহাব্যবস্থাপক উৎপাদন উত্তম চৌধুরী।

এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ইউরিয়ার সার উৎপাদনকারী চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার পরে পুনরায় ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সার উৎপাদনের যাওয়ার ৪৪ দিন পরে ১১ এপ্রিল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় কারখানায়।

একইভাবে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানাটি ২৪৮ দিন উৎপাদন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ওই দিন রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়।

এভাবে বিগত এক যুগ ধরে নানা কারণে বা অজুহাতে এই সার কারখানাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ এর পাশেই কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) ওই কারখানাতে গ্যাস সরবরাহ ঠিকই রয়েছে বলে সিইউএফএলের এ কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘কাফকোতে উৎপাদিত সার গড়ে প্রতিটন আন্তর্জাতিক দরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দরে সরকারকে ক্রয় করতে হয়। অপর দিকে সরকারি এই কারখানা উৎপাদিত সার ক্রয় করতে সরকারের খরচ হয় মাত্র ৩৪ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। অথচ ওই কারখানায় তুলনামূলক সবসময় গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকে বলে তিনি আক্ষেপ করেন।