বিএনপি নেতার ঈদ শুভেচ্ছা পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় বিএনপি ও যুবদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হামলা-পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষে ৬ নারীসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৫ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ৮ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি বাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার পিঙ্গলাকাঠি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল শিকদার (২৮) ও তার স্ত্রী ইলমা ইয়াসমিন (২৪) দাওয়াত খাওয়ার জন্য মামা আলম শিকদারের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পথিমধ্যে টিনে লাগানো বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপনের ঈদ শুভেচ্ছা পোস্টারের একাংশ ছিঁড়ে দুষ্টমির ছলে স্ত্রী ইয়াসমিনের গাঁয়ে ছুড়ে মারেন বেল্লাল। বিষয়টি দেখে মোটরসাইকেল থামিয়ে পোস্টার ছেঁড়ার কারণ জিজ্ঞসা করেন নলচিড়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল মোল্লা। এ নিয়ে সোহেল ও বেল্লালের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সোহেল উত্তেজিত হয়ে ইয়াসমিনকে মারার জন্য তেঁড়ে আসলে বেল্লাল ও সোহেলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল শিকদার জানান, এরই জের ধরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার নেতৃত্ব ১০/১২টি মোটরসাইকেলযোগে যুবদলের ২০/২৫ নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা, রামদা, লোহার রড নিয়ে পিঙ্গলাকাঠি বাজারের কাছে বেল্লালের মামা বিএনপি কর্মী আলম শিকদারের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন শিকদারের নেতৃত্বে বাড়ির ও বাজারের লোকজন পাল্টাহামলা চালালে ওই বাড়ির সামনের রাস্তায় ওপর উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হামলা-পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাত নারীসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়।
এ সময় সংঘর্ষে টিকতে না পেরে সোহেল মোল্লার সমর্থকরা পাঁচটি মোটরসাইকেল ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে হারুন সমর্থকরা ওই পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
হামলা ও সংঘর্ষে যুবদল নেতা সোহেল মোল্লার সমর্থক নলচিড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সুজন আকন (৪৫), যুবদল কর্মী আজিজুল সরদার (৪৮), সেলিম সরদার (৪৫), আলামিন হাওলাদার(৩৫), মনির খলিফা (৪০), টিপু সুলতান (৩২) ও বিএনপি নেতা হারুন শিকদারের সমর্থক যুবদল কর্মী শহিদুল শিকদার (৪২), আজিজুল শিকদার (১৭), সেনা সদস্য মেহেদী হাসান (২৫), তাসলিামা বেগম (৪৫), ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শুভ শিকদার (২০), যুবদল কর্মী ইঞ্জিনিয়ার বেল্লাল শিকদার (৩২), মনজিলা বেগম (৬১), ইলমা ইয়াসমিন (২৮), জিয়াসমিন বেগম (৬১), শারমিন (৩০), শেফালী বেগম(৩০), ছাত্রদল কর্মী আজিজুল শিকদার (২২)সহ উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়। এরমধ্যে আশঙ্কাজনক যুবদল কর্মী আজিজুল সরদার (৪৮), সেলিম সরদার (৪৫), শহিদুল শিকদার (৪২), তাসলিামা বেগম (৪৫), আজিজুল শিকদার (১৭)কে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নলচিড়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন সিকদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।