বরগুনার আমতলীতে শিক্ষক হামিদুর রহমান ও ছাত্র আশিক গাজীকে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো: জাহাঙ্গির হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আটকের পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য মো: জাহাঙ্গির হাওলাদারের ভাইয়ের ছেলে মো: রাকিব উত্তর সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির আগে একই সহপাঠি রাকিব ও আশিক গাজীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে ঢুকে আশিক গাজীকে মারধর করেন। ওই সময় শিক্ষক হামিদুর রহমান প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে বিদ্যালয় থেকে চলে যায়।
পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আহত ছাত্র ও শিক্ষককে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে এবং তাদের ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে আশিকের বাবা বাবুল গাজী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। রাতভর নাটকীয়তার পরে বুধবার দুপুরে পুলিশ জাহাঙ্গির হাওলাদারকে ছেড়ে দিয়েছে।
এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা আওয়ামী লীগ নেতাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন।
শিক্ষক হামিদুর রহমানের বাড়ী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কালিনগর গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক হামিদুর রহমানকে মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
জানা যায়, এক বছর আগে মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে জাহাঙ্গির মারধর করে কচুরীপানার মধ্যে ফেলে রাখে। ওই ঘটনায় মামলা চলমান রয়েছে। এ মামলায় তিনি বেশ কয়েকদিন জেল হাজতেও ছিলেন।
ছাত্র আশিক গাজী বলেন, ‘শ্রেণীকক্ষে পড়া নিয়ে রাকিবের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এতে রাকিবের চাচা জাহাঙ্গির হাওলাদার এসে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে আমাকে মারধর করে। হামিদুর রহমান স্যার প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।’
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক হোসেন মৃধা বলেন, ‘বিদ্যালয় শিক্ষক, ছাত্রকে মারধর করবে তা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্র আশিক গাজীকে আওয়ামী লীগ নেতা মারধর করে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকেও মারধর করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাড়ী অনেক দূরে। আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ব্যবস্থা নিবেন। এখানে আমার কিছুই করার নেই। আমি এর বাইরে কিছুই বলতে রাজি না।’
আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গির হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। কিভাবে সমাধান হলো এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।’
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো: ইউসুফ আলী বলেন, ‘ছাত্র অপরাধ করলে আমার কাছে বিচার দিতে পারতো কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গির হাওলাদার শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্র ও শিক্ষককে মারধর করেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা: রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আহত শিক্ষককের মাথায় আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
আমতলী থানার ওসি মো: আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘উভয় পক্ষ আপোষ মিমাংসাপত্র দেয়ায় জাহাঙ্গির হাওলাদারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছাত্র ও শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’