দেবিদ্বারে সিএনজি-অটোর দখলে স্কুল মাঠ, ব্যাহত খেলাধুলাসহ পাঠদান কার্যক্রম

এদিকে নানা সময়ে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকসহ অভিভাবকরা।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা

Location :

Cumilla
সিএনজি ও অটোরিকশার দখলে স্কুল মাঠ
সিএনজি ও অটোরিকশার দখলে স্কুল মাঠ |নয়া দিগন্ত

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ৪১ নম্বর খলিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে রাখে পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশা আর হকারেরা। মাঠে প্রায়ই রাখা হয় বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। ফলে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রাতকালীন সমারেশ, খেলাধুলা ও জাতীয় সংগীত গাওয়া। এছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠের ওপর দিয়ে অনবরত সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করায় শব্দ দূষণে ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান। এদিকে নানা সময়ে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকসহ অভিভাবকরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী ও ১১ জন শিক্ষক রয়েছেন। বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মাঠটিতে সিএনজি, অটোরিকশা ও ভ্রাম্যমাণ হকারের দখলে থাকে। এতে প্রায়ই বন্ধ থাকে সহপাঠ শিক্ষাকার্যক্রম। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভবন ঘেঁষে বাজার হওয়ায় প্রতিদিন সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের সামনে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানবাহনের হর্ন, ভিড় ও কোলাহলে শ্রেণিকক্ষের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা মাহনূর মরিয়ম জানায়, ‘স্কুলের মাঠে সিএনজি ও অটোরিকশা রাখায় আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। সকালের সমাবেশ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে সমস্যা হয়। আমাদের শ্রেণিকক্ষের অন্যপ্রান্তে টয়লেট হওয়ায় আমরা সিএনজি ও অটোরিকশার কারণে টয়লেটে যেতে বাধাগ্রস্ত হই। এছাড়া যানবাহনের শব্দ ও হর্ন বাজানোর কারণে শ্রেণিকক্ষে পড়া লেখা করতে পারি না ‘

একই কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনাছ, ফাইজা ও আমেনাসহ অনেকে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম সরকার ও লাইলী আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠটি সিএনজি, অটো ও পিকআপের দখলে থাকলে সকালে বাচ্চাদের শারীরিক শিক্ষা ও সহপাঠ কার্যক্রম করানো যায় না। সড়ক আটকে যান চলাচল বন্ধ রেখে সমাবেশ করতে হয়। প্রায়ই মাঠে নির্মাণ সামগ্রীসহ নানা কিছু রাখা হয়। এছাড়া মাঠের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে যানবাহন চলাচল করায় এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিএনজি ও অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হয়েছে। আমরা চালকদের মাঠে যানবাহন রাখতে নিষেধ করলেও তারা শোনেন না। আমরা দূর থেকে আসি এ জন্য ভয়ে কিছু বলি না।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শ্রেণিকক্ষের মাত্র পাঁচ ফুট দূরেই সারিবদ্ধ করে সিএনজি-অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। এসবের ফাঁক দিয়ে বাচ্চাদের ক্লাস রুমে যেতে হয় ও আসতে হয়; যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বস্তিকর। যানবাহনের জন্য বিকল্প স্থান করে দেয়া জরুরি।’

বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে রাখা অটোরিকশাচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের মাঠে অটোরিকশা রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাজার, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন কাজে লোকজন আসে। তাদের জন্য আমরা মাঠে অপেক্ষা করি। আমরা কি করব? আমাদের নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর আলম মুন্সী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে সিএনজি-অটোরিকশা পার্ক করে রাখে। অনেকে আবার নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখে। চালকদের বারবার বললেও তারা কোনো কথা শুনছেন না।’

দেবিদ্বার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সিএনজি-অটো পার্ক করে রাখা, এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি একটি স্থায়ী সমাধান করে দিবেন বলেছেন।’