টানা প্রায় দু’সপ্তাহ পর দু’দিন বিরতি দিয়ে সাতক্ষীরায় আবারো শুরু হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টিপাত। এতে করে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্মাঞ্চলের পাশপাশি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বিল, খাল, পুকুর, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, আউশ ধানের ক্ষেত ও আমন বীজতলা। বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকরা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্লাবিত এলাকার বহু পরিবার।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সোমবার ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার থেকে সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। এতে পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমাল্লারডাঙ্গি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বকচরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলার বিল, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা।
একই সাথে সদর উপজেলার আলিপুর, কাশেমপুর, বালিয়াডাঙ্গা, বাবুলিয়া, লাবসার মাগুরা, খেজুরডাঙি, গোপিনাথপুর, বল্লী, বিনেরপোতা, শাল্যে, মাছখোলাসহ উপজেলার নিম্মাঞ্চলের বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের বহু পরিবার। ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই মাচান বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
প্লাবিত এসব এলাকার লোকজনকে কলাগাছের ভেলায় চলাফেরা করতে দেখা গেছে। রান্না ঘরে পানি উঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলোতে রান্নাবান্না একরকম বন্ধ রয়েছে। চুলায় আগুন জ্বালানো তো দূরের কথা, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছে অনেক পরিবার। টিউবওয়েল ডুবে গেছে পানিতে। বাড়ির উঠানে হাটু সমান পানি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি জমে গেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদাউস বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব ড্রেনের মুখগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের পৌরসভার কর্মীরা ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে যে সকল খাল রয়েছে তার কচুরিপানা পরিষ্কার করছে, যাতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়।
তিনি আরো বলেন, পৌর সভার পানি নিষ্কাশনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সার্কিট হাউস থেকে বাইপাস পর্যন্ত একটি বড় ড্রেন নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাজেটের সাথে সাথে বাকি কাজগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকশৌলী মো: আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন নিম্মাঞ্চলের পাশপাশি পৌরসভার কয়েকটি এলাকার নিম্মাঞ্চলে জমে থাকা বৃষ্টির পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে সে জন্য বেতনা নদীর গাবতলা-উত্তর চাপড়া এলাকায় দেয়া আড়াআড়ি বাঁধ কাটা হয়েছে এখন উজান থেকে পানি দ্রুত ভাটায় নেমে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষায় দুই হাজার হেক্টর জমির আউস ধান, ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে।