মানিকগঞ্জে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। প্রাণবন্ত পরিবেশে গ্রাম বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে বাইচটি উপভোগ করেন। উপস্থিত দর্শক যেন এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর বেউথা ঘাট এলাকায় এ বর্ণাঢ্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, বাইচ উপভোগ করতে নদীর তীরজুড়ে জমায়েত হয় লক্ষাধিক মানুষের। শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই যেন ফিরে যান তার শেকড়ের সেই আনন্দঘন গ্রামীণ উৎসবে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনব্যাপী কাটান নদীর পাড়ের আনন্দময় পরিবেশে।
বাইচ দেখতে নদীর দু‘পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা, বেউথা সেতু, নদীর নৌকায়, বাড়ির ছাদসহ নদীর পাড়ের গাছের ডালে উঠেও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করে মানুষজন। এ সময় মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের একাধিক জেলার মানুষও উপস্থিত ছিল এ নৌকা বাইচে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইন্তেখাব হায়দার খান, জেলা পুলিশ সুপার মোসা: ইয়াসমিন খাতুন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আফরোজা খান রিতা, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা অঞ্চলের টিম সদস্য ও সাবেক জেলা আমির মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, জামায়াতের জেলা আমির হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আলী, এ ডি এম মোহাম্মদ নাজমুল হাসান খান, মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মো: শাহানুর ইসলাম প্রমুখ।
বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখা, সুষ্ঠু বিনোদন প্রদানসহ নৌকা বাইচ আমাদের সমাজে চমৎকার অবদান রাখে। আমাদের এসব ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যে মানিকগঞ্জ এসব আয়োজনে এগিয়ে আছে।‘
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নৌকা বাইচ আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আমাদের শেকড়, সংস্কৃতি ও মানুষের সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। নৌকা বাইচ বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মানুষের আত্মার সাথে সম্পর্কিত এক অবিচ্ছেদ্য উৎসব। এ আয়োজন নতুন প্রজন্মকে বাংলার শেকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা।’
আফরোজা খান রিতা বলেন, ‘এমন আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমরা এ সকল ভালো আয়োজনে সব সময় পাশে থাকব।’
মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘মানুষ যে এখনো আমাদের ঐতিহ্য লালন করে তা আজকের উপস্থিতি দেখেই আন্দাজ করা যায়। অপসংস্কৃতি রোধ ও সুষ্ঠু জাতি গঠনে আমাদের এ ধরনের আয়োজন আরো বেশি বেশি করতে হবে ‘
জানা যায়, এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় জেলার বিভিন্ন উপজেলার ঘাসি, পানসি, ছিপাসহ মোট ৩৫টি নৌকা দল। প্রতিটি দলে ছিল ৩০-৪০ জন মাঝি, যারা সমন্বিতভাবে নৌকা চালিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। নৌকাগুলোর নাম ছিল অত্যন্ত নান্দনিক ও ঐতিহ্যবাহী। যেমন- ‘সোনার তরী’, ‘তরঙ্গ’, ‘স্বাধীন বাংলা’, ‘চাচা-ভাতিজার নৌকা’ ইত্যাদি।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। চ্যাম্পিয়ন দলকে একটি মোটরসাইকেল, রানারআপ দলকে রেফ্রিজারেটর ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে রঙিন এলইডি টেলিভিশন দেয়া হয়। এছাড়া সকল অংশগ্রহণকারী দলকে সনদ, ট্রফি ও নদগ অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
নৌকা বাইচের সাথে গ্রামীণ মেলার আয়োজনও ছিল। মেলায় হাওয়াই মিঠাই, মাটির পুতুল, খেলনার দোকান, পিঠা-পুলি, বাঁশি ও ঢোলের মধুর সুর ছিল।
এদিকে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগসহ ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অনুষ্ঠান ঘিরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জ জানা গেছে।