এবার খোদ মালিকেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন বাস চলাচল। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরতে যাওয়া তিন জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষগুলোও পড়েছেন বিপাকে। তাই বিকল্প উপায়ে তারা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, একতা পরিবহনের বাসগুলোর পাশাপাশি ঢাকা-রাজশাহী রুটে লোকাল বাস চলাচল করছে। তবে অন্য পরিবহনের বাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব বাসের মালিকদের সাথে শ্রমিকদের টানাপোড়েন চলছে। কবে বাস চালু হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এর আগে চলতি সেপ্টেম্বরেই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দুই দফা দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেন চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা।
বাস মালিকপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এরপরও তারা অযৌক্তিক দাবি সামনে আনছেন, যা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকদের সাথে না পেরে তারা নিজেরাই এবার বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি মালিকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালক প্রতিটি ট্রিপে ১ হাজার ২৫০ টাকা, সুপারভাইজার ৫০০ টাকা ও সহকারী ৪০০ টাকা পান। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। দুই দিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তারা ফের বাস চালানো শুরু করেন। কিন্তু আশ্বাস অনুযায়ী বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা না হলে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।
শ্রমিকদের দুই দফা আন্দোলনের পর গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মালিক-শ্রমিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়— শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে চালককে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৭৫০ টাকা ও সহকারীকে ৭০০ টাকা দেওয়া হবে।
মালিকদের অভিযোগ, বেশি বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শ্রমিকেরা বিনা টিকিটের যাত্রী তুলছিলেন। আর শ্রমিকদের অভিযোগ, বাড়তি টাকা দেয়ার কথা হলেও বাস্তবে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকেরা। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্তও বাস চলাচল বন্ধ থাকে। রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চাপ বেড়েছে একতা পরিবহনের বাসে। এ ছাড়া কষ্ট করে অনেকে লোকাল বাসে ওঠার চেষ্টা করছেন। তবে বাড়তি চাপে লোকাল বাসেও ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমাদের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কথা হয়েছে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগেই মালিকপক্ষ হঠাৎ করে বাস বন্ধ করে দিয়েছে এই বলে যে, তারা বাড়তি বেতন দিতে পারবে না। এখন শ্রমিকেরা বসে আছে। গাড়ি চালালে তারা চালাবে। তা না হলে তো মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।’
তবে বাস বন্ধের অন্য কারণ জানিয়ে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান রতন বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ঢাকায় বসা হয়েছিল। তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সভা সুন্দরভাবেই শেষ হয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর বাস চলাচলও শুরু হয়। কিন্তু বাড়তি বেতন দেয়ার কথা হওয়ার পর এখন শ্রমিকেরা যেখানে–সেখানে বিনা টিকিটে যাত্রী তুলতে চাইছেন। খোরাকি ভাতা দাবি করছেন। এসব তো মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’
বজলুর রহমান রতন আরো বলেন, ‘শ্রমিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এভাবে বাস চালাতে চাই না। তারা কয়দিন বসে থাকবে থাকুক।’