সিলেট বিভাগে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দেখালো জামায়াত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসনে (মাধবপুর- চুনারুঘাট) জামায়াত থেকে এমপি পদে নির্বাচনের জন্য মজলুম সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। এ আসনে দৈনিক আমার দেশের সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে ওই আসনে জরুরি রুকন (সদস্য) সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ঘোষণা করেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের। এর আগে চুনারুঘাট-মাধবপুর আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমান।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করেছিলেন আমার দেশের সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। ওই রিপোর্ট হওয়ার পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমার দেশ বন্ধ করে দেয় এবং সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দেশে ছাড়তে বাধ্য করেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তারা দেশে এসে আবার আমার দেশ চালু করেন। অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট করেন নোমান।
এদিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের পর মাওলানা মুখলিছুর রহমান তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ প্রিয় চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলাবাসী আশাকরি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আপনারা সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের দো’য়ায় ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমি জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় জামায়াতের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত সহযোগিতায় নিয়মিত গণসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততার কাজ চালিয়ে গেছি। মাঠের মানুষ, সাধারণ ভোটার এবং আমাদের সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা, সাড়া ও উৎসাহ পেয়েছি—তা আমার জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।
তিনি আরো লিখেন, কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সংগঠনের কৌশলগত বিচক্ষণতার জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠন এই আসনে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে আমার সাথে পরামর্শ করে আমার সম্মতিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত, দেশের স্বার্থ এবং ইসলামী রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকে আমি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত ও মেনে নিচ্ছি।
মাওলানা মুখলিছুর রহমান লিখেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, ব্যক্তিগত পদ-পদবি বা মনোনয়ন নয়; আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ ন্যায়নীতি, সুশাসন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। তাই আমি নিজে এবং আমার সহকর্মীরা আগের মতোই পূর্ণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িপাল্লার বিজয়ের জন্য মাঠে কাজ চালিয়ে যাব।’
মুখলিছুর রহমান- চুনারুঘাট ও মাধবপুরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ভুলে, বিভ্রান্তি ও আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ইটাখোলা গ্রামেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা খ্যাতিমান সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান সিলেট বিভাগের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা সানাউল্লাহ (র.) (যিনি বৃহত্তর হবিগঞ্জের মানুষের কাছে পীর সাহেব হুজুর হিসেবে পরিচিত) ও মরহুমা রহিমা বেগমের সন্তান। নোমান ইটাখোলা ফাজিল মাদরাসায় প্রাথমিক থেকে আলিম পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে শায়েস্তাগঞ্জ আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল উত্তীর্ণ হয়ে পুরো হবিগঞ্জ জেলা কেন্দ্র থেকে একমাত্র উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি সোনাকান্দা আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল (হাদিস) এবং মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে কামিল (আরবি সাহিত্য) একই সাথে বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএসএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এছাড়া তিনি লন্ডনে নির্বাসনে থাকা কালে আমার দেশ পত্রিকার অনলাইন ভার্সন চালু করেন। চব্বিশের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমার দেশ পত্রিকা চালু হলে তিনি ফের আমার দেশে যোগ দেন।



