টানা অবরোধ, সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। অবরোধ স্থগিত হলেও জনমনে রয়েছে আতঙ্ক। খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর ও গুইমারা উপজেলায় বহাল রয়েছে ১৪৪ ধারা। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (১ অক্টোবর) দিনভর দূরপাল্লার যান চলাচল সীমিত হলেও শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরবাইকসহ ব্যক্তিগত যান চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। দোকানপাটও সীমিত আকারে খুলতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
গুইমারার সহিংস ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। দুই এক দিনের মধ্যে কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে বিষয়টি দৃশ্যমান হবে। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত স্বনির্ভর বাজার পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েলও তার সাথে ছিলেন। কবে নাগাদ ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবকিছু স্বাভাবিক হলে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চাহিদা (মতামত) বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত শনিবার দুপুরে অবরোধ চলাকালে সদর উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি দু’পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার জের ধরে স্বনির্ভর বাজারের ১৬টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরাই এ হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। সন্ত্রাসীরা এ সময় বাজারের পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালায়।
জেলা প্রশাসক জানান, প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে আছে এবং সাথে থাকতে চাই। ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণ করা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে কিছু পণ্য সহায়তা দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিরুপণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হবে।
এর আগে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দেয় তারা। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের ভিত্তিতে অবরোধ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংগঠনের ফেসবুক পেজে জানানো হয়।
এদিকে, ১৪৪ ধারা বহাল থাকার কারণে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় এখনো বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি ও পুলিশ টহল জোরদার করেছে।
খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
‘ধর্ষণের আলামত’ পাওয়া যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য সম্পর্কে সিভিল সার্জন ডা: ছাবের বলেন, ‘মেডিক্যাল রিপোর্ট পুলিশের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’
জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতা হয়। এতে গুইমারায় দুষ্কিৃতিকারীদের হামলায় তিনজন নিহত হন এবং সেনা, বিজিবি, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। গুইমারার রামসু বাজারসহ আশপাশের এলাকায় বহু দোকানপাট, বসতবাড়ি ও সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে এবং কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। পর দিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে (১৯) আটক করে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ডাক দেয় জুম্ম ছাত্র জনতা। শুরুর দিকে এর নেতৃত্বে উক্যনু মারমা নামক এক যুবক থাকলেও শনিবার খাগড়াছড়ি সদরে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের পর এক ফেসবুক পোস্টে জানানো হয় ব্যক্তিগত কারণে উক্যানু মারমা আর এই আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে যুক্ত থাকছেন না। তবে আন্দোলন চলমান থাকার ঘোষণাও দেয়া হয় একই পোস্টে। কে বা কারা এর নেতৃত্বে তা জানানো হয়নি। পর দিন রোববার ১৪৪ ধারা অমান্য করে অবরোধের সমর্থনে গুইমারায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়।