ফরিদপুরে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ : ইপিআই বাস্তবায়নে ইতিবাচক প্রভাবের আশা

‘বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। সারাদেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলায় এই জনবলের ঘাটতি ছিলো প্রকট। ফলে প্রত্যন্ত জনপদে ওয়ার্ডভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে চরম বেগ পেতে হতো।’

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

Location :

Faridpur Sadar
ফরিদপুরে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ : ইপিআই বাস্তবায়নে ইতিবাচক প্রভাবের আশা
ফরিদপুরে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ : ইপিআই বাস্তবায়নে ইতিবাচক প্রভাবের আশা |নয়া দিগন্ত

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারীর সকল শূন্যপদ পূরণ হওয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে। বড় ধরনের এই নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ায় ইপিআই অর্থাৎ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি গতি পেয়েছে।

ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে স্বাস্থ্য সহকারী থাকেন। তবে এতোদিন এসব পদ শূন্যই ছিলো। ফলে প্রতিবছর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সরকার গৃহিত স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে নানা বেগ পেতে হতো। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সতর্কতার সাথে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবছরের জুনে এসব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে ফরিদপুরে প্রান্তিক জনগণের আর টিকা পেতে অসুবিধা হবে না।

যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, পোলিও, হাম এবং রুবেলা এই ১০টি রোগের ১১টি টিকা দেয়া হয় বর্তমানে। ফরিদপুর জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৫৬ হাজার শিশুকে ইপিআই-এর টিকা দেয়া হয়। কিন্তু জনবল কম থাকায় এতোদিন ভালোভাবে এই কার্যক্রম চালানো যেতো না। ফলে ইপিআই কর্মসূচির ইনডিকেটরে ফরিদপুরের অবস্থান ছিল ৪৬ নম্বর। যা ফরিদপুরবাসীর স্বাস্থ্যেসবার জন্য হানিকর। বর্তমানে এই শূন্যতা পূরণের পর ফরিদপুর জেলার অবস্থান শীর্ষ ১০-এ নিয়ে আসা সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় স্বাস্থ্য সহকারীর মোট পদ ২৮৮ টি। এর মধ্যে ১০৪টি পদই শূন্য ছিলো এতোদিন।

দীর্ঘ সাত বছর আগে ২০১৮ সালে এসব পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিলো। তবে জটিলতার কারণে কোনো সিভিল সার্জন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেননি। বর্তমান সিভিল সার্জন যোগদানের পর টিকাদান কর্মসূচি বেগবান করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

ফরিদপুরে স্বাস্থ্য সহকারীর ১০৪টি সহ ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডে আরো ২৫জনসহ সবমিলিয়ে ১২৯ টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২৫ হাজারেরও বেশি প্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১০ হাজার পরীক্ষার্থী। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৭১০ জন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ২৯ মে চূড়ান্তভাবে ১২৯ জনের নির্বাচিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ওয়ার্ডজনিত জটিলতা থাকায় এদের মধ্যে তিনজনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদের ১ জুন থেকে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, এই নিয়োগযুদ্ধে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী থাকায় স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শুরু থেকেই ব্যাপক সতর্কতা ছিলো। পরীক্ষার্থীদের বাছাইয়ের মান বজায় রাখতে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখেছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারেরা। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নিয়োগ কমিটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের ঢাকা বিভাগের পরিচালক ডা: মো: জাহাঙ্গীর আলম। সদস্য সচিব ছিলেন সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদুল হাসান। সদস্য হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি মনিরা সুলতানা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: সোহরাব হোসেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। সারাদেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলায় এই জনবলের ঘাটতি ছিলো প্রকট। ফলে প্রত্যন্ত জনপদে ওয়ার্ডভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে চরম বেগ পেতে হতো।’

তিনি বলেন, ‘এক ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারীকে তিনটি ওয়ার্ডেও কাজ করতে হতো। এই ঘাটতি পূরণ হওয়ায় প্রান্তিক জনগণের টিকা পেতে সমস্যা থাকলো না। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জেলার স্বাস্থ্য সেবায়।’

ডা: মাহমুদুল হাসান আরো বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্যে থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কোনো ধরনের অসাধুপন্থা যাতে কেউ অবলম্বন করতে না পারে সেজন্য বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারিও ছিলো। আশা করছি এর সুফল মিলবে।’