ফেনীতে ‘নরনীয়া’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

সামাজিক সংগঠন ‘নরনীয়া’ ফেনীর ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, সমস্যা সমাধান ও তরুণ নেতৃত্বে গবেষণাভিত্তিক উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। তথ্যভিত্তিক ডকুমেন্টেশন, সেমিনার ও প্রকাশনার মাধ্যমে জেলার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তুলে ধরাই এর লক্ষ্য।

শাহাদাত হোসাইন, ফেনী অফিস

Location :

Feni
ফেনীতে ‘নরনীয়া’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
ফেনীতে ‘নরনীয়া’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন |নয়া দিগন্ত

ফেনীতে ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক সংকলন ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নরনীয়া’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে শহরের ভাষা শহীদ সালাম কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান।

নরনীয়া সভাপতি প্রফেসর টুটুল কান্তি সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ও ফেনী সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো: জহির উদ্দিন।

নরনীয়া’র যুগ্ম-সম্পাদক আইনুল হক এমিলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ফেনী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর তায়বুল হক, ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব ডা. তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়েজিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন খান এবং সাংবাদিক আবু তাহের।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন মুন্সিরখিল পজির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবদীন মজুমদার এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমন উল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বদিউর রহমান বলেন, ‘ডুমুরুয়া থেকে সচিবালয়’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক বই লিখেছি। সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ছয়টি বই রচনা করেছেন। শেকড়কে অস্বীকার করা যায় না। ঠেলাগাড়ি থেকে হেলিকপ্টার যুগে এসেছি, কিন্তু মানের দিক থেকে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তা ভাবার বিষয়। সংগঠন গঠনের সময় সুন্দর সুন্দর কথা বলা হয়, শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতটা চেষ্টা থাকে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সংগঠনের জন্ম-মৃত্যু দেখেছি। ‘পল্লী দিশারী’ নামে একটি সমিতি গঠন করেছিলাম, এলাকায় অনেক কাজও করেছি। কিন্তু নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে একসময় তা ভেঙে যায়। নরনীয়াও যেন আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে ফেনী কলেজ, ফেনী পাইলট হাই স্কুলসহ স্থানীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণে ধাপে ধাপে কাজ শুরু করতে হবে।

প্রফেসর তায়বুল হক বলেন, নরনীয়ার মাধ্যমে আমাদের শেকড়ের সন্ধান করতে হবে। জানতে হবে, সেই শেকড় কত গভীরে। গাছ যত বড় হোক, শেকড় গভীরে না থাকলে তা উপড়ে যায়। তাই শুধু সন্ধান নয়, শেকড় সংরক্ষণও জরুরি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কৃষ্টি ও সভ্যতা জাগ্রত থাকবে।

ডা. তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়েজিদ বলেন, ফেনীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিধি বিস্তৃত। মোগল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুগে অনেক কাজ হয়েছে বলেই আজকের ফেনী রূপান্তরিত হয়েছে। নবীন সেন মাঝামাঝি সময়ে এসেছেন এবং ব্রিটিশের গোলামি করেছেন। ফেনী ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত, ভুলুয়ার নয়। আজকের বাংলাদেশ থেকে নয়, বরং সঠিকভাবে পেছন থেকে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি স্তর দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রশাসনিক নয়, জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যা হয়নি। সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।

নরনীয়া’র সাধারণ সম্পাদক ইমন উল হক বলেন, ফেনীর হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ, জেলার সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবসম্মত সমাধান উপস্থাপন, তরুণ সমাজকে নেতৃত্ব, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে গড়ে তোলা, ফেনীর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা, জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান, ব্যক্তি ও ঘটনাবলির তথ্যভিত্তিক ডকুমেন্টেশন তৈরি, বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, পাবলিকেশন ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান বিস্তারের লক্ষ্যে ‘নরনীয়া’ যাত্রা শুরু করেছে।

তিনি জানান, সংগঠনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—ফেনীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা (বই, নিবন্ধ, তথ্যচিত্র), সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা সভা ও সমাধানমূলক প্রকল্প গ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ‘ফেনী উৎসব’ ও ‘ঐতিহ্য মেলা’ আয়োজন, স্থানীয় ইতিহাসভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক বা পাঠ্যসামগ্রী তৈরি, প্রবীণ নাগরিকদের স্মৃতিচারণমূলক প্রকল্প এবং “ফেনী ভলান্টিয়ার নেটওয়ার্ক” গঠন করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত টিম তৈরির উদ্যোগ।