ভারত থেকে চাল আসছে, তবুও বাজারে দাম স্থিতিশীল

সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে আমদানি চলমান থাকলেও, বাজারে আগের মতোই দাম বাড়তি অবস্থায় রয়েছে।

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা

Location :

Jashore
বেনাপোল বন্দরে পন্যবোঝাই ট্রাক
বেনাপোল বন্দরে পন্যবোঝাই ট্রাক |নয়া দিগন্ত

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চালের আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দাম স্থিতিশীল নেই। ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭১টি ট্রাকে মোট দুই হাজার ৪৮৫ টন চাল দেশে প্রবেশ করেছে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে আমদানি চলমান থাকলেও, বাজারে আগের মতোই দাম বাড়তি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে বন্দরের চাল আমদানিকারকরা জানায়, চাল আমদানিতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। যার কারণে বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমানে চাল দেশে ঢুকছে। তবে দামের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দু’মাস আগে ইরি-বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হলেও দেশের বাজারে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে থাকে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকার বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের নামে বরাদ্দ ইস্যু করে চাল আমদানি করার জন্য অনুমতি দেয়।

এরপর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে মেসার্স উষা ট্রেডিং, মেসার্স মৌসুমী ট্রেডার্স, মেসার্স হাজী মুছা করিম অ্যান্ড সন্স, মেসার্স গণী এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স প্রিয়ম এন্টারপ্রাইজ নামের আমদানিকারকরা সাধারণত ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন।

প্রসিদ্ধ চাল আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নামে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে চাল আসা শুরু হওয়ায় পাইকারী ও খুচরা বাজারে কিছুটা দাম কমেছে। এই ভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আরো দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারের কাছে চাল আমদানি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।

আরেক আমদানিকারক শামীম আহমেদ জানান, বন্দরের মোকামে আমদানি করা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্নাসহ মিনিকেট জাতের চাল। সম্পা কাটারী জাতের চাল কেজি ৭০ থেকে ৭১ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল কেজি ৫২ থেকে ৫৩ টাকা টাকা এবং আঠাশ জাতের চাল কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চাল আমদানি করে লাভ হচ্ছে না।

কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশে চাল আমদানি শুরু হওয়ার আগেই ভারতের ব্যবসায়ীরা কেজিতে তিন থেকে চার টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। দাম না বাড়ালে দেশে চালের দাম কমে আসতো।

বেনাপোল বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজি স্টোরের হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে চালের দাম নিয়ে কিছুটা হলেও ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গত ১০ থেকে ১২ দিন আগে সম্পা কাটারি ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন কেজি ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য চাল কিছুটা কমেছে।

ক্রেতা হারুনুর রশীদ ও আসাদুর রহমান জানান, আগের চেয়ে দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা করে কমেছে। আমরা দিন মজুরী করি। যত কমবে আমাদের জন্য তত ভালো। ভারত থেকে চাল আসার কারণে মনে হচ্ছে কমেছে। আগে দাম বেশি ছিল। হিসাবে আরো কমার কথা। দু’মাস আগে ইরি-বোরা মৌসুম গেল। সেই চাল তো বাজারে থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মজুদ করার কারণে সরকারকে আমদানি করতে হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় বেনাপোল বন্দরে চাল আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরটিতে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে, এবার চালের দাম কমে আসবে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত দু’সপ্তাহে ৭১ ট্রাকে দুই হাজার ৪৮৫ টন চাল ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট নয়টি ট্রাকে ৩১৫ টন, ২৪ আগস্ট ছয়টি ট্রাকে ২১০ টন, ২৭ আগস্ট দু’টি চালানে ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২৮ আগস্ট তিনটি ট্রাকে ১০৫ টন, ৩০ আগস্ট ছয়টি ট্রাকে ২১০ টন, ৩১ আগস্ট ছয়টি ট্রাকে ২১০ টন, ১ সেপ্টেম্বর ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২ সেপ্টেম্বর ১৪ ট্রাকে ৪৯০ টন, ৩ সেপ্টেম্বর তিনটি ট্রাকে ১০৫ টন এবং গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে ছয়টি ট্রাকে ২১০ টন চাল আমদানি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমদানি করা চাল দ্রুততম সময়ে ছাড়করণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল।