চেয়ারম্যান কুদ্দুসসহ আটক ৮

শরীয়তপুরের বিলাসপুরে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আসামি ১ হাজার

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৮ ও র‌্যাব-৩ (ঢাকা)-এর যৌথ অভিযানে প্রধান আসামি কুদ্দুস বেপারীকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও জাজিরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার আব্দুল কুদ্দুস ও আসামিরা
শরীয়তপুরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার আব্দুল কুদ্দুস ও আসামিরা |ছবি : নয়া দিগন্ত

শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে দু’শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণে সংঘর্ষের ঘটনায় জাজিরা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় জাজিরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সঞ্চয় কুমার দাসের করা মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করে ৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো এক হাজারজনকে আসামি করা হয়।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৮ ও র‌্যাব-৩ (ঢাকা)-এর যৌথ অভিযানে প্রধান আসামি কুদ্দুস বেপারীকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও জাজিরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মামলার অন্য আসামিদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুরে প্রায় ২০ বছর থেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। বিশেষ করে দু’ঈদে যখন সকল লোক এলাকায় অবস্থান করে তখনই সংঘর্ষের দামামা বাজতে শুরু করে।

এছাড়াও এই দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নিত্য দিনের। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকায় তৈরি করে ককটেল-হাতবোমা। ওই এলাকার অনেক মহিলারাও এই কাজে সমান অংশীদার হয়। যখন সংঘর্ষ শুরু হয় তখন মহিলারা পেছন থেকে উপকরণ সরবরাহ করতে থাকে। যা হয়ত দেশব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনার তুলনায় বিরল। এই এলাকার ধারাবাহিক সংঘর্ষের বলি শুধু বিবাদকারীরাই না এলাকর অনেক সাধারণ মানুষ চিরতরে হারিয়েছেন পরিবারের উপার্জনকারীকে। কেউ কেউ হারিয়েছেন হাত-পা এবং বরণ করেছেন সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুদ্দুস বেপারী বিজয়ী ও জলিল মাদবর পরাজিত হওয়ার পর থেকে দু’গ্রুপের এই বিবাদ আরো জোরদার হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কুদ্দুস এবং জলিল সমর্থকদের মধ্যে মুর্হুমুহ ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষ হয়। এলাকাবাসী এখন এই বর্বর সংঘর্ষের ঘটনা থেকে মুক্তি চায়, শান্তি চায়। তাদের দাবি, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা যাতে আবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে এজন্য কঠোর আইনিব্যবস্থা নিতে হবে।

বিলাসপুর ইউনিয়নের জানখারকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান বলেন, আমরা দীর্ঘ পনেরো বছর যাবত এলাকায় দু’পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ দেখে আসছি। সন্ত্রাসীরা নিজেদের আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে ধারাবাহিকভাবে এলাকায় ককটেল, টেঁটা, ঢাল-সরকিসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে গোলযোগ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট করে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। একপক্ষ অন্য পক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজের যে তাণ্ডবলীলা চালায় তা মানুষ হিসেবে আমাদেরকে লজ্জা দেয়। আমরা চাই, চিহ্নিত এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে ও সন্ত্রাসীদের চিরতরে নিবৃত্ত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা পরিবর্তিত এই সময়ে আগের সন্ত্রাসী বর্বরতার দৃশ্য আর দেখতে চাই না।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ দুলাল আখন্দ বলেন, বিলাসপুরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় উপ-পুলিশ পরিদর্শক সঞ্চয় কুমার দাসের করা মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া ৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো এক হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্য থেকে সাতজনকে আটক করেছি। বাকি আসামিদেরকে দ্রুততম আইনের আওতায় আনতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছি।

র‌্যাব-৮ মাদারীপুরের কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন (এসপি) বলেন, র‌্যাব-৮ ও র‌্যাব-৩ (ঢাকা)-এর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে বিলাসপুর সংঘর্ষের মামলার প্রধান আসামি আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে ঢাকার শাহজাহানপুর মুমিনবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে শরীয়তপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলাম বলেন, গতকালের সংঘর্ষের পর থেকেই আমরা স্থানীয়ভাবে ককটেল তৈরির উৎস এবং হোতাদের সন্ধানে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি এবং ককটেল তৈরির সরঞ্জামের উৎসের সন্ধানে নেমেছি। এখন থেকে যাতে এই ককটেল বা দেশীয় অস্ত্র তৈরি, সংগ্রহ, মজুত ও ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশের সক্ষমতার শতভাগ ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করছি। যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজের যে প্রক্রিয়া ছিল তা সমূলে উৎখাত করব।

এ বিষয়ে কোনো ধরনের অনুকম্পা তারা পাবে না। পুলিশ ওই এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।