গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘রিজেনারেটিভ অ্যাগ্রিকালচার ফর সাসটেইনেবল ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের উদ্বোধনী ও টেকনিক্যাল অধিবেশন ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর গবেষণা-আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে। রিজেনারেটিভ কৃষি ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি করাই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ।
উদ্বোধনী সেশনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ডের এগ্রোস্কোপের প্রধান ড. স্টিফেন ম্যান। সম্মেলনে গাকৃবির প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, ডিন, পরিচালক, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, রেজিস্ট্রেশনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিদেশি বিজ্ঞানী-বিশেষত পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুইজারল্যান্ড, নাইজেরিয়া থেকে আগত গবেষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সরকারি-বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ ১,২০০ নিবন্ধিত গবেষকের উপস্থিতিতে এ সম্মেলন এক বৈশ্বিক জ্ঞানমেলায় পরিণত হয়।
সম্মেলনের অর্গানাইজিং কমিটির কনভেনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো: সফিউল ইসলাম আফ্রাদ স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। স্বাগত বক্তব্যের পর উন্মোচন করা হয় সম্মেলনের অ্যাবস্ট্রাক্ট বই। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি অব ভাওয়ালপুর থেকে আগত প্রফেসর ড. ওয়াজিদ নাসিম যাতই। তিনি রিজেনারেটিভ কৃষিব্যবস্থার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরে বিশেষ অতিথি ও প্রধান অতিথি তাদের বক্তব্যে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশ-বিদেশের গবেষকদের পারস্পরিক সহযোগিতা, তথ্য-উপাত্ত বিনিময় ও সম্মিলিত কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এ সময় সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে ভিসি বলেন, ‘মাটিকে বাঁচানো, কৃষিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। তাই এ সম্মেলন শুধু জ্ঞান বিনিময়ের আয়োজন নয়, বরং বৈশ্বিক সহযোগিতা ও মানবিক দায়িত্ববোধের এক অনন্য সেতুবন্ধন। দেশ ও দেশের বাইরের নানা প্রান্ত থেকে আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বাস করে সম্মিলিত প্রয়াসই একটি টেকসই, ক্ষুধামুক্ত ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে।’
ভিসির বক্তব্যের পর ড. নাসিম যাতই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অতিথিবৃন্দকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সম্মাননা চাদর পরিয়ে দেন।
এ সম্মেলন উপলক্ষে দেশের খ্যাতনামা সরকারি-বেসরকারী ও কোম্পানীসমূহ স্টলে পণ্য সাজিয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরেন এবং বিক্রয় করেন যেগুলো ভিসি ও আগত অতিথিবৃন্দ পরিদর্শন করেন। পরবর্তী টেকনিক্যাল সেশনে ১০টি থিমেটিক এরিয়ায় ১০টি করে অগ্রগামী গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যেখানে খাদ্য উৎপাদনের স্থায়ীত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, রিজেনারেটিভ ফার্মিং, ডিজিটাল অ্যাগ্রিকালচারসহ সমসাময়িক বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আরো ১০টি থিমেটিক এরিয়ায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ওরাল ফ্ল্যাশ, পোস্টার প্রেজেন্টেশন, র্যাপোর্টাস সামারি প্রভৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠদের পুরস্কার প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ রায়হান।



