সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ভিডিও ক্লিপ দেখে আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি একজনও (সিসিটিভিতে শনাক্ত হওয়া নীল জামা পরা আরমান) যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করীম খান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রাপ্তিসাপেক্ষে ১৫ দিনের মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। সেখানে চাঁদাবাজি নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজানের স্ত্রী গোলাপিকে দিয়ে পথচারী গার্মেন্টস শ্রমিক বাদশাকে হানিট্যাপে ফেলা হয়। বাদশা পাশের একটি বুথ থেকে টাকা তোলার সময় চক্রটি তাকে টার্গেট করে। তিনি বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফেরার পথে গোলাপি তাকে হানিট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন।
বাদশা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বুঝতে পেরে কেটে পড়ার চেষ্টা করেন। এসময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে গোলাপির তাকে টেনে ধরলে তিনি থাপ্পর দিয়ে ছুটার চেষ্টা করেন। এসময় পাশে উঁৎপেতে থাকা গোলাপির স্বামী মিজানের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা বাদশার ওপর চড়াও হয়। এসময় তারা বাদশাকে চাপাতি দিয়ে কুপাতে থাকলে এ দৃশ্য কাছে থেকে ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
সন্ত্রাসীরা এসময় ভয় পেয়ে যায়। তারা ভিডিও মুছে ফেলতে সাংবাদিক তুহিনকে চাপ দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তুহিন দৌড়ে পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেই তাকে ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এঘটনায় বাদশা ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন জিএমপি কমিশনার।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, বাসন থানা পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা গত রাতে (শুক্রবার দিবাগত) গাজীপুর মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলোচিত সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামিসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, স্থানীয় চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার মঞ্জুরের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে ১৫ মামলার আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫) এবং তার স্ত্রী গোলাপী (২৫)। স্থানীয় টেকনগ পাড়ার মোহাম্মদ আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া ও পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আরো দুই মামলার আসামি স্বাধীন (২৮), তাকে র্যাব গ্রেফতার করে। স্থানীয় সাদুপাড়ার অস্থায়ী বাসিন্দা ও খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ময়লাপোতা গ্রামের হানিফের ছেলে দুই মামলার আসামি আল আমিন (২১)। কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূইয়ার ছেলে আট মামলার আসামি শাহজালাল (৩২)। স্থানীয় চান্না এলাকার রফিকুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও পাবনা জেলার চাটমোহর থানার কিয়ামুদ্দিন হাসানের ছেলে একাধিক মামলার আসামি ফয়সাল হাসান (২৩) ও সাব্বির (২৫)।
এর আগে সকাল ১১টায় র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানি, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুরের কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি স্বাধীনকে গত রাতে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতারের তথ্য জানান।