উখিয়ায় ইউপি সদস্য খুন, ১৪ জনের নামে মামলা

মামলায় ১৪ জনকে আসামির মধ্যে আটজনের নাম উল্লেখ এবং ছয়জনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)

Location :

Ukhia
কামাল হোসেন
কামাল হোসেন |নয়া দিগন্ত

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামাল হোসেন দূর্জয় ওরফে কামাল মেম্বার হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে উখিয়া থানায় নিহতের ছোট ভাই সাহাব উদ্দিন এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ১৪ জনকে আসামির মধ্যে আটজনের নাম উল্লেখ এবং ছয়জনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলা দায়েরের পরপরই অভিযুক্তদের গ্রেফতারে একাধিক দল মাঠে নেমেছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন মনখালী এলাকার আবদুর রহিম, তোফাইল আহমদ, জুহুর আহমদ চৌধুরী, শরিফুল হক সাগর, জহির আহমদ, নুরুল বশর, মোহাম্মদ রিদোয়ান ও শরিফুল হক নাহিদ। এ আটজনই ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই নিহত কামালের বড় ভাই জসিম উদ্দিন হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ধারণা করা হচ্ছে, সেই পুরনো রেষারেষির জের ধরেই এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার (৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে কামাল মেম্বার বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। সারারাত খোঁজাখুঁজির পর ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুরে মনখালী এলাকার একটি পাহাড়ি ছরায় ভেসে থাকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, তাকে বস্তাবন্দি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত ও প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পরে পানিতে চুবিয়ে ফেলা হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জসিম উদ্দিন।

কামাল হোসেন ছিলেন জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য এবং উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

তার জানাজা আগে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘এই হত্যা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল। খুনিরা যেই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।’

স্থানীয়রা বলছেন, উখিয়ায় আর নিরাপদে কেউ নেই। একজন জনপ্রতিনিধিকেও যদি রাতের আঁধারে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে?

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

নিহত কামালের পরিবারের দাবি, ২০১৯ সালে বড় ভাই জসিম উদ্দিন হত্যার পর থেকেই কামাল মেম্বার হুমকির মুখে ছিলেন। হত্যার ঘটনার পাঁচ বছর পর সেই একই গ্রুপ আবারো আঘাত হানল। এখন শুধু দ্রুত গ্রেফতার নয়, এই হত্যার পেছনে কারা পরিকল্পনা করেছে, কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তা উদ্ঘাটন করে কঠোর বিচার নিশ্চিত করাই হবে প্রকৃত ন্যায়বিচার। এমন একটি নির্মম হত্যা যদি বিচারহীনতার গহ্বরে হারিয়ে যায়, তাহলে সমাজে দৃষ্টান্তমূলক বার্তা যাবে না-এমনটিই আশঙ্কা সাধারণ মানুষের। পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, মামলা দায়েরের পর স্বস্তি পেলেও নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা এখন একটাই দাবি জানাচ্ছেন,আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যেন আর কোনো কামাল মেম্বারকে প্রাণ দিতে না হয়।